নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের দরপত্র বিক্রিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ঠিকাদার সারা দিন বসে থেকেও দরপত্র কিনতে পারেননি। এ ঘটনায় সাধারণ ঠিকাদাররা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দরপত্র বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার সুবর্ণচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, গত ১২ মার্চ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক দীপক রঞ্জন অধিকারী স্বাক্ষরিত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে গ্রামীণ মাটির রাস্তার টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। এতে প্রায় ৬২ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে একটি সড়কের এইচবিবি করণের দরপত্র আহ্বান করা হয়।
বুধবার এই দরপত্র বিক্রির শেষ দিন ছিল। বেশ কয়েকজন ঠিকাদার সুবর্ণচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ, জেলা দুর্যোগ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে দরপত্র পাননি।
ঠিকদারদের অভিযোগ, সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ খসরু ও চরবাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম রাজীব এবং সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দরপত্র বিক্রির শেষ দিনেও কিনতে ব্যর্থ তারা।
ঠিকাদার কামাল উদ্দিন, মোসলেহ উদ্দিন সোহেল ও সোলতান মাহমুদ খসরু বলেন, সুবর্ণচর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও জেলা দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক এবং দুই ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজশে নিজস্ব লোক ছাড়া কারো কাছে দরপত্র বিক্রি করা হয়নি। শেষ দিন সরাসারি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দরপত্র কেনাবেচা বন্ধ রাখা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ দরপত্র বিক্রির সময় ছুটি নেন, কিন্তু এ সময়ে তার কর্মস্থলে থাকার কথা।
উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয়ের অফিস সহকারী আজগর হোসেন বলেন, ‘যে ইউনিয়নে কাজ ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খসরু সাহেব কাজটি করবেন। তিনি ইউএনও স্যারের রুমে আছেন একটু পরে আসবেন।’
চর জুবলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ খসরু অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে জানান, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
চরবাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম রাজীব বলেন, ‘আমি ঠিকাদারী করি না, আমার কোনো ঠিকাদারী লাইসেন্স নাই। বদনাম হবে বিধায় এগুলো থেকে সবসময় দূরে থাকি।’
এ বিষয়ে জানতে সুবর্ণচর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাউছার আহমেদের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
জেলা দুর্যোগ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানও অভিযোগ নাকচ করেন। তার দাবি, দরপত্র বিক্রি করা হয়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৈতী সর্ববিদ্যা বলেন, ‘দরপত্রের বিষয়ে আমার কিছুই করার নাই। ডিসি স্যারের অনুমতি ছাড়া আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।’
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দরপত্র সবার কাছে বিক্রি হওয়ার কথা। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক দীপক রঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘দরপত্র ওপেন করে দেয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কেন সিডিউল বিক্রি করছে না, বিষয়টি আমি দেখছি।’