ময়মনসিংহের নান্দাইলে ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্র মাহফুজুর রহমান সাজিদকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুইজনকে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বুধবার।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, সাজিদের বড় ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ ছিল আসামিদের। প্রতিশোধ নিতে সাজিদকে হত্যা করেন তারা।
আসামিরা হলেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের ৪৫ বছরের মো. হান্নান ও তার মামাতো ভাই ময়মনসিংহের নান্দাইলের ১৯ বছরের মো. আরমান।
আসামিদের বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মূখ্য বিচারিক হাকিম রাজীব আহম্মেদ তালুকদারের আদালতে তোলা হয়। তারা সাজিদ হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নিউজবাংলাকে এসব নিশ্চিত করেছেন আদালত পরিদর্শক প্রসূন কান্তি দাস।
ডিবির কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর থানা এলাকা থেকে হান্নান ও আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, অটোরিকশাচালক হান্নান গাজীপুরের ভবানীপুর এলাকায় স্ত্রী ও ৩ সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন। তার স্ত্রী সেখানে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক।
হান্নানের স্বীকারোক্তির বরাতে ডিবির ওসি জানান, ওই পোশাক কারখানায় সহকর্মী রবিউল আওয়ালের সঙ্গে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে হান্নানের স্ত্রীর। মাস চারেক আগে এক সন্তানকে নিয়ে রবিউলের সঙ্গে অন্যত্র চলে যান ওই নারী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন হান্নান।
ডিবি জানায়, রবিউলকে না পেয়ে তার পরিবারের কাউকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন হান্নান। তিনি গত ২৬ মার্চ নান্দাইলে মামাতো ভাই আরমানের বাড়িতে যান। আরমানকে নিয়ে সে রাতে রবিউলের বাড়িতে ঢুকে রবিউলের ছোট ভাই সাজিদকে পেয়ে যান। তাকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যান।
ওসি জানান, এ ঘটনায় গত সোমবার সাজিদের মা ইয়াসমিন বেগম নান্দাইল মডেল থানায় মামলা করেন, যা তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি। তদন্তের পর আসামিদের গ্রেপ্তার ও তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশের পুকুরপাড় থেকে রক্তমাখা জামা ও হত্যায় ব্যবহার করা ছুরি জব্দ করা হয়।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) খন্দকার ফজলে রাব্বী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছরের সংসার জীবনে অনাকাঙ্খিত ভাঙনের পর প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে হান্নান। সেই আক্রোশ থেকেই রবিউল বা তার পরিবারের কাউকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে সে।’
নিহত সাজিদ পড়ত স্থানীয় শাহ নূরনবী উচ্চ বিদ্যাপিঠের অষ্টম শ্রেণিতে।
নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি থেকে গত রোববার সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সে সময় নান্দাইল মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওবায়দুর রহমান জানান, সাজিদের বাবা মৃত। শনিবার রাতে তার বড় ভাই রবিউল কিশোরগঞ্জে খালার বাড়িতে এবং তার মা নান্দাইলের বাকচান্দা গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সাজিদ বাড়িতে একা ছিল।