বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্লগার অনন্ত হত্যা: রায়ে অসন্তুষ্ট দুই পক্ষই

  •    
  • ৩০ মার্চ, ২০২২ ১৬:৫৬

ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি আবুল খায়েরের আইনজীবী আব্দুল আহাদ বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আবুল খায়েরের সামান্যতম সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ওই সময় সে ফেসবুক বা ব্লগ ব্যবহার করত না। অনন্ত বিজয়কেও চিনত না। তবু তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এই রায়ে ন্যায়বিচার গুরুতর লঙ্ঘিত হয়েছে। আমি মনে করি, এই রায় যথার্থ হয়নি। আইনের পরিপন্থি রায় হয়েছে। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যাব।’

সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার রায়কে ‘আইনের পরিপন্থি’ বলে অভিযোগ করেছেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আবুল খায়েরের আইনজীবী আব্দুল আহাদ। অপরদিকে রায়ে এক আসামিকে খালাস দেয়ায় অখুশি বাদীপক্ষের আইনজীবী মিসবাহউদ্দিন সিরাজও। তবে রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

অসন্তুষ্ট দুই পক্ষই জানিয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন তারা। এদিকে অনন্ত বিজয়ের পরিবারের চাওয়া, দ্রুত রায় কার্যকর এবং পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করা।

বুধবার দুপরে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় চার জনকে। একই সঙ্গে তাদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ে খালাস দেয়া হয়েছে একজনকে।

দণ্ডিতরা হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের মামুনুর রশীদ ওরফে হারুন অর রশিদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ। এদের মধ্যে কেবল আবুল খায়েরই কারাগারে আছেন। বাকি তিনজনই পলাতক।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোমিনুর রহমান টিটু বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে। অপরাধ করে কেউ রেহাই পাবে না, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও রায়ে সন্তুষ্ট নয় বাদী ও বিবাদী পক্ষ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আবুল খায়েরের কোনো পাওয়া যায়নি দাবি করে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবী আব্দুল আহাদ। বলেন, ‘ওই সময় সে ফেসবুক বা ব্লগ ব্যবহার করত না। অনন্ত বিজয়কেও চিনত না। তবু তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই রায়ে ন্যায়বিচার গুরুতর লঙ্ঘিত হয়েছে। আমি মনে করি, এই রায় যথার্থ হয়নি। আইনের পরিপন্থি রায় হয়েছে। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যাব।’

রায়ে চার জনকে সর্বোচ্চ দণ্ড দেয়া হলেও খালাস দেয়া হয়েছে নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার দণ্ডিত আসামি।

ফারাবী খালাস পাওয়ায় রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজও। তিনি বলেন, ‘ফারাবীকে খালাস দেয়ায় রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমরা আদালতে তার অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তবু কি কারণে তাকে খালাস দেয়া হলো তা বুঝতেছি না।’

বাদীপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ ব্যাপারে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অনন্ত বিজয়ের বোনজামাই সমর বিজয় শী শেখর। রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রায় বাস্তবায়ন হলেই পরিবার কিছুটা স্বস্তি পাবে। আমরা চাই রায় দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। এছাড়া দণ্ডিত তিনজনই পলাতক রয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।’

যেভাবে হত্যা করা হয় অনন্তকে

২০১৫ সালের ১২ মে। প্রতিদিনের মতো সেদিনও অফিসে যেতে সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা অনন্ত বিজয় দাশ। সিলেট নগরের সুবিদবাজারের দস্তিদারপাড়ায় থাকতেন তিনি।

বাসা থেকে বের হয়ে মূল সড়কে আসার পরপরই আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা করে। তবে প্রাণভয়ে দৌড়াতে থাকেন অনন্ত। শেষে বাড়ির পাশে দিঘির সামনে নিয়ে তাকে কোপানো হয়।

অনন্তের চিৎকার শুনে বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন তার বোন। অনন্তকে হাসপাতালে নিতে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদের সাহায্য চান। কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে ক্ষতবিক্ষত অনন্তকে তারা ভাই-বোন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মামলা, তদন্ত, বিচার

অনন্তকে হত্যার পরদিনই তার বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

এজাহারে বলা হয়, বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

প্রথমে মামলাটি পুলিশ তদন্ত করলেও পরে তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তরিত হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। এতে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

এই মামলায় সাক্ষী ছিলেন ২৯ জন। তবে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারায় অন্তত ১৫ দফা পেছায় মামলার শুনানি। এ ছাড়া করোনার কারণেও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল মামলার কার্যক্রম।

অবশেষে মামলাটি দ্রুত শেষ করতে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয় এর কার্যক্রম। এতে গতি আসে মামলার কার্যক্রমে।

এ বিভাগের আরো খবর