বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মা সেতুর হিসাব মিলবে না যে সড়কে

  •    
  • ৩০ মার্চ, ২০২২ ১২:২৩

ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা সৈকত ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার। এই সড়কের পুরোটাই মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত। বর্তমানে সরু এই সড়ক দিয়ে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ১০ জেলার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালু হলে এই ভিড় আরও বহুগুনে বেড়ে যেতে পারে।  

হিসাব অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালু হলে মাত্র ৫ ঘণ্টায় রাজধানী থেকে কুয়াকাটায় পৌঁছানো যাবে। কিন্তু ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত সরু একটি সড়ক এই হিসাব গোলমাল করে দিতে পারে।

সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে বাড়তি যানবাহনের চাপ পেরিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমুদ্র দেখা কিংবা পায়রা বন্দরে যাতায়াতের যে আশা করা হচ্ছে, তা পূরন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

কারণ মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত এই সড়কটিতে এমনিতেই যানবাহনের ভিড় লেগে থাকে। সেতু চালু হলে আরও এই ভিড় আরও ৩/৪ গুন বাড়বে। বাড়তি যানবাহনের চাপে স্বাভাবিকভাবেই এই সড়কে প্রতিদিনই বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হবে। এতে ৫ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লেগে যেতে পারে ১০/১২ ঘণ্টাও।

এ অবস্থায় ২০২৩ সালে চালু হতে যাওয়া স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল মিলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। অথচ বহু আগে এই সড়কটিকে ৬ লেন করার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ এবং সড়ক প্রশস্তকরণে জমি অধিগ্রহনের জন্য অর্থ বরাদ্দও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি সেই কাজ। পরপর ৩ বার ফেরত গেছে বরাদ্দ অর্থ।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘বর্তমানে যানবাহনের চাপ সামলাতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে সড়কটি। ভাঙ্গা পর্যন্ত চলতে হয় ধীর গতিতে। পদ্মা সেতু চালু হলে ভয়াবহ হবে পরিস্থিতি। এখন এই সড়কে যদি প্রতিদিন ৫ হাজার যান চলাচল করে তখন চলবে ১৫ হাজার। ফলে এখন ভাঙ্গা যেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে তখন দ্বিগুন সময় লাগবে।’

কিশোর আশঙ্কা করছেন, সেতু চালুর পর এই সড়কটিতে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যেতে পারে। কেননা এই সড়কে শুধু দূরপাল্লার পরিবহনই নয়, স্থানীয় থ্রি হুইলারগুলোও চলাচল করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ কিংবা আলাদা লেন না দিলে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ৪ লেন করার প্রাথমিক কাজ শুরু করে সড়ক ও সেতু বিভাগ। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য তোলা হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায়।

পরে পাশ হওয়া ওই প্রকল্পে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ লেনের এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। আর সড়কটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

প্রকল্প অনুযায়ী, সড়কটি হবে ১৭০ ফুট চওড়া। বিপরীতমুখী ডাবল লেনের দুটি সড়কসহ ধীর গতির স্থানীয় যানবাহনের জন্য দুটি আলাদা সার্ভিস লেন করার অনুমোদন দেয় একনেক।

২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর পাশ হওয়া ওই প্রকল্প প্রস্তাবে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে বলা হয়। কিন্তু ২০২২ সালের মার্চেও সেই কাজ শুরু করতে পারেনি সড়ক ও সেতু বিভাগ। পরপর ৩ বার ফেরত গেছে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ। সর্বশেষ চলতি অর্থ বছরে যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাও ফেরত যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

এ বিষয়ে সড়ক ও সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ খান বলেন, ‘সড়ক নির্মাণে ঠিক কতটুকু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে তা চিহ্নিত করার দায়িত্ব পাওয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভুলের কারণেই এই দীর্ঘসূত্রিতা। জমি চিহ্নিত করতে একদিকে যেমন তারা সর্বশেষ ম্যাপ পর্চা ব্যবহার করেনি, অন্যদিকে জমি চিহ্নিতকরণেও ছিল ত্রুটি।

‘১৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক প্রশস্তকরণে তারা মাত্র ৩০২ একর জমি অধিগ্রহনের প্রস্তাব করেছে। বিষয়টি নিয়ে খটকা লাগায় আমরা নিজস্ব সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপ করে দেখি জমি লাগবে ১ হাজার ৯১ একর। এভাবে নানা ভুলের কারণে নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়নি অধিগ্রহণ।’

সড়ক ও জনপথ বরিশাল সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জণ দেবনাথ বলেন, ‘মাদারীপুর ও ফরিদপুরের জমি অধিগ্রহণের কাজ বেশ ভালোভাবেই চলছে। তবে একটু ধীর গতিতে চলছে বরিশালে। আমরা গৌরনদীর জমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে প্রেরণ করেছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে।’

প্রকল্পের পরিচালক সড়ক ও সেতু বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তারেক ইকবাল বলেন, ‘বর্তমানে দ্রুত গতিতে জমি অধিগ্রহনের কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় জমি চিহ্নিত করার পর তা অধিগ্রহনের ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর এবং বরিশালের জেলা প্রশাসনকে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর