বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভুয়া তালিকা করে এতিমের টাকা লোপাট

  •    
  • ৩০ মার্চ, ২০২২ ০৯:০৬

একজন এতিমকে মাসে দুই হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৬ মাসে ১২ হাজার করে বছরে দুইবারে মোট ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে খাবার বাবদ দেয়া হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা, পোশাকের জন্য ২০০, ওষুধ ও অন্যান্য বাবদও সমান বরাদ্দ দেয়া হয়। বরগুনায় প্রায় সব এতিমখানাতেই এই টাকা আত্মসাৎ করতে ভুয়া এতিম বানানোর অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও একজন এতিমও নেই, কিন্তু টাকা আনা হয়।

বরগুনায় এতিমখানা ও শিশু সদনে মাদ্রাসাছাত্রদের ভুয়া এতিম ও অসহায় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

কাগজে-কলমে এতিম দেখানো হলেও বাস্তবে এতিম নয় এমন শিক্ষার্থীদের নাম ব্যবহার করে এতিমখানার পরিচালকরা বরাদ্দের টাকা পকেটে পুরছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, ভুয়া এতিম দেখিয়ে বরাদ্দ লোপাটের আর সুযোগ নেই। প্রকৃত এতিমদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইউসুফ আলীর দেয়া তথ্য মতে, বরগুনায় সরকারের তালিকাভুক্ত ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত মোট ১২৪টি এতিমখানা রয়েছে, যার মধ্যে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বরাদ্দের আওতায় এতিম দেখানো হয়েছে দুই হাজার ৩৮৮ জন।

ক্যাপিটেশন বরাদ্দের অনুকূলে এতিমখানার ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী এতিম অর্থাৎ পিতৃহীন বা পিতৃমাতৃহীন দরিদ্র শিশুর ৫০ শতাংশ বরাদ্দের আওতায় আসবে। অর্থাৎ একটি এতিমখানায় যদি ১০০ শিক্ষার্থী থাকে তবে ৫০ জনের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হবে।

একজন এতিমকে মাসে দুই হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৬ মাসে ১২ হাজার করে বছরে দুইবারে মোট ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে খাবার বাবদ দেয়া হয় এক হাজার ৬০০ টাকা, পোশাকের জন্য ২০০ টাকা, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদও সমান বরাদ্দ দেয়া হয়।

জেলায় চলতি অর্থবছরে ২ হাজার ৩৮৮ জন এতিমের জন্য ৫ কোটি ৩১ লাখ ২ হাজার টাকা পাঠানো হয়। প্রথম কিস্তিতে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত ১২৪টি এতিমখানায় দেয়া হয়েছে।

এতিম কাগজে আছে, বাস্তবে নেই

সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া হাশেমিয়া শিশু সদনটিতে কাগজে-কলমে ৩৮ জন এতিম দেখানো হয়েছে। কিন্তু বুধবার সেখানে গিয়ে কোনো এতিমের দেখা মেলেনি। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো রান্না হয়নি। নেই কোনো বাবুর্চিও।

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি এতিমখানাটির সাইনবোর্ড পাল্টে আঙ্গারপাড়া হাশেমিয়া শিশু সদনের বদলে রাখা হয়েছে আঙ্গারপাড়া ইসলামিয়া শিশু সদন।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘গত সাত-আট বছরে এখানে আমরা কোনো এতিম শিশুকে থাকতে দেখিনি। এখানে কাউকে রান্নাও করতে দেখিনি।’

তবে এতিমখানা তত্ত্বাবধায়ক দুলাল দফাদারের দাবি, তার এখানে নিয়মিত রান্না হয়, বাবুর্চিও আছেন। তবে কয়েক দিন হলো এতিম শিশুরা বাড়ি বেড়াতে যাওয়ায় আপাতত রান্নাবান্না বন্ধ।

শহরের মাদ্রাসা সড়কের নেছারিয়া শিশু সদনটিও সরকারের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট পাওয়া এতিমখানার তালিকাভুক্ত। কাগজে-কলমে এখানে ৪২ জনের অনুকূলে মাসে ৮৪ হাজার আর বছরে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মাদ্রাসা লাগোয়া ছাত্রদের হোস্টেলকে সুকৌশলে নেছারিয়া শিশু সদন ও মাদ্রাসাটির সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪২ জনকে এতিম দেখিয়ে এখানেও বরাদ্দের বেশির ভাগ অর্থ লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে।

মাদ্রাসার পরিচালক মামুন অর-রশীদ। তার সামনেই শিশু সদনের এতিম হিসেবে বরাদ্দ আসা দুজন শিক্ষার্থীর কাছে বাবার নাম ও পেশা জানতে চাওয়া হয়।

ওই শিশুদের একজনের বাবা পেশায় মুদি দোকানি ও একজনের বাবা মাছ শিকার করা জেলে। তাদের মাও জীবিত। এমনকি এতিম ও অসহায়দের তালিকায় তাদের অনুকূলে বরাদ্দ আসে- এমন তথ্যও জানে না পরিবারটি।

দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও নেছারিয়া শিশু সদনের পরিচালক মামুন-অর-রশীদ অবশ্য এ চিত্র অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এতিমখানায় এতিম ও অসহায় শিশু আছে। তাদের নিয়মিত খাবার, পোশাক ও ওষুধ কিনে দেয়া হয়।’

একই চিত্র বরগুনার তালতলী উপজেলার নয়াপাড়া জাকিরতবক ছালেহিয়া শিশু সদনের। এই শিশু সদনে ৩৬ জন এতিম ও অসহায় শিশুর অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে সেখানেও জাকিরতবক সালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রদের থাকার হোস্টেলটিকে এতিমখানা ও ছাত্রদের এতিম দেখিয়ে বরাদ্দ লোপাট করা হয়।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, মাদ্রাসার সুপার আনোয়ার হোসেন নিজের আত্মীয়স্বজনদের শিশুদের এতিম দেখিয়ে বরাদ্দ তোলেন।

আনোয়ার হোসেন অবশ্য দাবি করেন, ‘আমার এখানে এতিম অসহায়রা আছে। আমি তাদের পেছনেই এসব বরাদ্দ খরচা করি।’

ঠিক একই রকম চিত্র বরগুনা জেলার শতাধিক এতিমখানা ও শিশু সদনের। অধিকাংশেরই প্রকৃত এতিম নেই, মাদ্রাসার ছাত্রদের এতিম দেখিয়ে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টের আওতায় নিয়ে ভাতার টাকা তুলে নিয়ে নেন পরিচালকরা। বরগুনা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘এতিমখানায় যে অনিয়ম হয় না, এমন নয়। আমরা ইতোমধ্যে অনেকের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বন্ধ করেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে এতিম না পাওয়া গেলে বাকিদেরও বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়া হবে। এসব অনিয়ম বন্ধে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।’বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরাদ্দ পাওয়া এতিমখানাগুলো আমরা জরিপ করে ইতোমধ্যে প্রকৃত এতিমদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। প্রকৃত এতিম ছাড়া কেউ যেন বরাদ্দ না পায়, সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যারা ভুয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করেছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর