ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা তাতীপাড়া গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী বিধবা অধিকা রানীর ভাগ্যে জোটেনি নলকূপ। তাই গৃহস্থালি কাজ আর তৃষ্ণা মেটাতে পানি সংগ্রহ করেন প্রাচীন আমলের অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ একটি কুয়ো থেকে। এই পানি পান করে একদিকে রোগ-শোক বাসা বাঁধছে, অন্যদিকে শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তার সময় কাটছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, রশি বাঁধা বালতি ফেলে কুয়া থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন অধিকা। তার পরিবার ছাড়া আরও একটি পরিবার এই কুয়ার ওপরই নির্ভরশীল।
অধিকা জানান, ৯ বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় তার দিনমজুর স্বামী মারা যান। এরপর থেকে দুই সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরেই আছেন। অভাবের সংসারে অনেক চেষ্টা করেও তিনি নলকূপ বসাতে পারেননি।
অধিকা বলেন, ‘সন্তানদের মানুষ করতে ১৫০-২৫০ টাকা হাজিরায় মাঠে কৃষি কাজ করি। তাই আট-দশ হাজার টাকা খরচ করে নলকূপ বসানো হয়নি৷ ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে সেটাই জোরাতালি দিয়ে সন্তানদের নিয়ে থাকি।’
আক্ষেপ করে অধিকা রানী বলেন, ‘শুনেছি সরকার গরিবদের টিউবওয়েল, ঘর সবই দিচ্ছে। কিন্তু আমরা পাই না। শুধু ভোট এলে আমাদের দিকে তাকায় তারা।’
ওই কুয়ায় বালতি ফেলে পানি টেনে তুলছিলেন অন্য পরিবারের গৃহিনী প্রভাতি রানী। বিধবা অধিকা তার দেবরের স্ত্রী। ৪৫ বছরের বয়সী প্রভাতি বলেন, ‘সবাই নলকূপে পানি পান করে আমরা পারি না। আমরা মাঠে কামলা দেয়া মানুষ। তাও দৈনিক কাম পাই না। টিউবওয়েল দিতে টাকা জমালেও থাকে না। অসুখের শরীরে চিকিৎসা নিতে হয়। বাসায় নাতনি আছে তিন বছরের। কুয়োর ভয়ে থাকি।’
প্রভাতি জানান, কুয়ার পানিতে দুর্গন্ধ। এতে ময়লা আবর্জনা গিয়ে পড়ে। এজন্য প্রায়ই তারা রোগে আক্রান্ত হন।
বিধবা অধিকার ভাসুর পরেশ ধঞ্জয় বাঠু বলেন, ‘স্থানীয় মেম্বার কুলুরাম ও চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন ভোটের সময় এসে দেখে গেছেন। জয়ী হলে নলকূপ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু দেননি। এখন নলকূপ চাইলে উল্টো হাসেন তারা। তখন বুঝি, নলকূপ আর পাবো না। আর চাইও না। খেয়ে না খেয়ে নলকূপ বসাতে হবে৷ কিন্তু কবে পারবো জানি না।’
স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, ‘কুয়োতে জল তুলে পানির কাজ করার চিত্র দেখে মনে হয় কোন প্রাচীন আসলে বসবাস করছি। মানুষগুলো খুব অসহায়। দিন আনে দিন খায়। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা দরকার। গ্রামের প্রভাবশালীরাও যেন দেখেও না দেখার ভান ধরে থাকে। সমাজে এমন অসহায় মানুষদের কষ্ট লাঘব করতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও সহযোগিতা করা জরুরি।’
স্থানীয় আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না বা কেউ জানায়নি। তাদের পরিষদে পাঠায় দেন।’
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নলকূপ না থাকায় কুয়ার পানি পান করছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা ছিল না। বিষয়টি দুঃখজনক। ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা আমাকে এ বিষয়ে জানায়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’