বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দারুণ লভ্যাংশেও দরপতন, গাঢ় হচ্ছে হতাশা

  •    
  • ২৯ মার্চ, ২০২২ ১৬:২৮

গত বছরের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধন চলতি বছরের শুরুতে কাটার ইঙ্গিত দিয়েও আবার মন্দাভাবে ফিরে যায় জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়েই। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর শুরু হওয়া ধস ঠেকানো হয়েছে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে এক দিনে হয়তো সূচকের বড় দরপতন হচ্ছে না, তবে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ২ শতাংশ বা কাছাকাছি কমে গিয়ে আর ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা না থাকার কারণে লেনদেনেও দেখা যাচ্ছে মন্দাভাব।

শেয়ারের দর ১৭ টাকা ৪০ পয়সা, লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ। এই সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর দিন শেয়ারের দর পড়ল ৪০ পয়সা।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের লভ্যাংশসংক্রান্ত ঘোষণার কারণে কোম্পানিটির শেয়ারদরে কোনো মূল্যসীমা না থাকার দিন শতকরা হিসেবে দর কমল ২.২৯ শতাংশ। তবে এমনিতে ২ শতাংশের বেশি কমার সুযোগ ছিল না।

একই দিন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শেয়ারের দর কমল ৯.৩১ শতাংশ। এটি হয়েছে কোম্পানিটির লভ্যাংশসংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে। কোম্পানিটি এবার লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে সাড়ে ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে বোনাস শেয়ার হিসেবে দেয়া হবে ১০ শতাংশ। বাকি সাড়ে ১৭ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা দেয়া হবে নগদে।

রেকর্ড ডেট সোমবার শেয়ারদর ছিল ৭৬ টাকা ২০ পয়সা। ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার যুক্ত হলে শেয়ারদর সমন্বয় হয়েছে ৬৯ টাকা ৩০ পয়সা। দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ৬৯ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ ২০ পয়সা কমেছে সেখান থেকে।

১০ মাস পর জ্বালানি খাতের কোম্পানি কেপিসিএলের উৎপাদন শুরুর পর দুই দিনে শেয়ারের ক্রেতা নেই। তবে দুই বছরের জন্য আবার কোম্পানিটির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ৩৫ টাকায় বিক্রেতা ছিল না। সোমবার ৩৩ টাকা ৭০ পয়সায় ক্রেতা ছিল না।

দেশের পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক না, সেটি এই তিনটি উদাহরণে বোঝানো যায়।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধন চলতি বছরের শুরুতে কাটার ইঙ্গিত দিয়েও আবার মন্দাভাবে ফিরে যায় জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়েই। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর শুরু হওয়া ধস ঠেকানো হয়েছে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে।

কিন্তু এই সিদ্ধান্তে এক দিনে হয়তো সূচকের বড় দরপতন হচ্ছে না, তবে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ২ শতাংশ বা কাছাকাছি কমে গিয়ে আর ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা না থাকার কারণে লেনদেনেও দেখা যাচ্ছে মন্দাভাব।

গত ৯ ও ১০ মার্চ ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিএসইসিতে বৈঠক করে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পরেও লেনদেন সেভাবে বাড়ছে না। ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও বিনিয়োগে না গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক বেড়েছে ৭ পয়েন্ট, বেড়েছে ১৭৮টি কোম্পানির দর, কমেছে ১৫০টির। অপরিবর্তিত থাকে বাকি ৫২টির দর।

মঙ্গলবার সূচক বেড়ে গিয়েও পরে কমে শেষ হয় লেনদেন

তবে যেগুলোর দর কমেছে দুই শতাংশ বা কাছাকাছি দর কমে ক্রেতাশূন্য হয়ে গেছে ৫০টির মতো কোম্পানি। অর্ধাৎ বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন শেয়ারদর আরও কমবে, এই ভাবনায় তারা বিনিয়োগে যেতে রাজি হচ্ছেন না।

লেনদেন হয়েছে গত ১৫ মার্চের পর সর্বোচ্চ ৯৮১ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ নিয়ে টানা তিন দিন বাড়ল লেনদেন। আগের দুই দিন হাতবদল হয় যথাক্রমে ৯২৪ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা ও ৮৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের মধ্যে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বুধবার। নানা সময় এই ধরনের বৈঠককে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দেয়। তবে গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এই বৈঠক শেষে ফলপ্রসূ তেমন কোনো ঘোষণা আসে না। আর ঘোষণা এলেও বাজারে প্রভাব পড়ে না। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এখনও অনেকটাই সতর্ক।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশের চিত্র

সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে, এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোনো একক খাতের প্রাধান্য দেখা যায়নি। তবে এই ১০টি কোম্পানির মধ্যে তিনটি ছিল স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি, যেগুলোর সহসা ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণ নেই।

সবচেয়ে বেশি ৮.৭৫ শতাংশ দর বেড়েলে নর্দার্ন জুটের। ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই একটি কোম্পানির শেয়ারদরই দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁতে দেখা গেছে। কোম্পানিটি আর্থিক হিসাব বিবরণীই প্রকাশ করছে না। ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিতে শেয়ার প্রতি ৬ টাকা লোকসান দেয়ার কথা জানানোর পর এর আয় ব্যয়ের কী চিত্র, সেটি বিনিয়োগকারীরা জানতে পারছে না।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে লোকসানি আর যে দুটি কোম্পানি ছিল, তার মধ্যে অষ্টম স্থানে ছিল স্টাইলক্রাফট, যার দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি আর দশম স্থানে ছিল জুন স্পিনার্স, যার দর বেড়েছে ৪.৯১ শতাংশ।

এর মধ্যে স্টাইলক্রাফট গত কয়েক বছর ধরে সংকটে পড়েছে। ২০২১ সালে লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দেয়নি, চলতি বছর অর্ধবার্ষিক হিসাব অনুযায়ী শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৪ টাকা ২০ পয়সা।

আর জুন স্পিনার্স তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কখনও লভ্যাংশ দিয়েছে, এমন তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে নেই। চলতি বছর অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ২১ টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি।

শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটির দর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি, আরও ৬টির বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।

সবচেয়ে বেশি দর পতনের শেয়ারের ক্রেতা নেই

দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণের পর থেকে যে চিত্রটি একেবারেই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে, সেটি হলো, নিম্নসীমায় লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর ক্রেতা থাকে না। একই চিত্র দেখা গেল আবার।

সবচেয়ে বেশি দরপতন দেখালেও ডাচ্- বাংলা ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন আসলে হয়েছে ২০ পয়সা। আর ১ টাকা ৭৫ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ধরলেও বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৫৫ পয়সা মুনাফা হয়েছে।

এমনিতে সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১.৯৮ শতাংশ দর কমেছে মনোস্পুল পেপারের।

তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, এটলাস, এমবি ফার্মা, রংপুর ফাউন্ড্রি, জেমিনি সি ফুড, পেপার প্রসেসিং, এপেক্স ফুড ও মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ ছিল দরপতনের শীর্ষ তালিকায় যেগুলোর বেশিরভাগ আগের দিন ছিল সব বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়।

এ বিভাগের আরো খবর