শিষ্টাচার বহির্ভূত ও রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ এনে আইজিপি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতির চরম অবনতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের তারা এখন রাজনীতি ও দুর্নীতিতে ব্যস্ত। কদিন আগেও পুলিশের আইজি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন আর ডিএমপি কমিশনার খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শিষ্টাচার বহির্ভূত।
গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে বিএনপি হঠাৎ করেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নানা কটাক্ষের পর বিএনপি নেতারা কয়েক মাস এ নিয়ে আর কিছু বলেননি। এবার স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে আবার এই কথাগুলো তুলেছেন ফখরুল।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পাশাপাশি ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলামও বিএনপির এই দাবি নিয়ে কথা বলেছেন শনিবার। পুলিশের একটি আয়োজনে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা পার্টির সিনিয়র নেতারা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এটা হাস্যকর। যাকে তার স্বামী পরিত্যক্ত করেছিল পাকিস্তানের ওখানে কী করছ...। সেটা আর না বলি। কিন্তু সত্য জিনিস যেটা সেটা কিন্তু দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যেখানে আমাদের স্বাধীনতা থাকবে, নির্ভয়ে কথা বলতে পারব। কিন্তু স্বাধীনতার পরই আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, তাদের (আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার) অবিলম্বে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের সভাপতিত্বে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগও আজ স্বাধীন নয়। বিচারকদের স্বাধীনতা নেই। ডিসি এসপি আর আইন মন্ত্রণালয় যেভাবে চায় সেভাবে বিচায় হয়। তাদের নির্দেশে জামিন হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলে দেশে মেগা উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু আদতে মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু দুর্নীতি করে ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্নীতির টাকা কানাডায় পাচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যেখানে আমাদের স্বাধীনতা থাকবে, নির্ভয়ে কথা বলতে পারব। কিন্তু স্বাধীনতার পরই আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ‘আওয়ামী লীগের দুঃসাশনের কারণে ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ এসেছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি এনে দিয়েছিলেন। এই সরকার এসে আবার সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে।’
দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে বিএনপির সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ, সহক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বগুড়া পৌরসভার মেয়র ও নির্বাহী সদস্য রেজাউল করিম বাদশা, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামিম, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী।
সম্মেলনের পর শুরু হয় কাউন্সিল। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদে ভোটগ্রহণ চলছে।
এই তিন পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন প্রার্থী। মোট ১৮ শ ১৮ জন ভোটারের ভোট দেয়ার কথা রয়েছে।
কাউন্সিলে সভাপতি পদে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সাধারণ সম্পাদক পদে আ. ফ. ম কামাল, আলী আহমদ, ইমরান আহমদ চৌধুরী ও মো. আব্দুল মান্নান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এম মুজিবুর রহমান মুজিব, লোকমান আহমদ ও মো. শামিম আহমদ প্রার্থী হয়েছেন।
এবারের কাউন্সিলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন। তবে কেন্দ্রের একরকম চাপে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
এর আগে সবশেষ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল হয়। এতে কাউন্সিলরদের ভোটে আবুল কাহের চৌধুরী শামীম সভাপতি ও আলী আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০১৯ সালের ২ অক্টোবর সিলেট জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল। তিন মাসের এই কমিটি প্রায় আড়াই বছর পার করে দিয়েছে।