মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে বাংলাদেশ আবারও উন্নয়নের মহীসোপানে উন্নীত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সোমবার জাতীয় সংসদে ‘বাজেট ২০২১-২২: দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ উপস্থাপনকালে এ আশার কথা বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডজনিত স্থানীয় ও বৈশ্বিক লকডাউনের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশ আবারও উন্নয়নের মহীসোপানে উন্নীত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময় হারসহ সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কাজ করছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে দেখা দেওয়া বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কিছুটা প্রভাব আমাদের এখানে পড়লেও অর্থবছর শেষে দেশের মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করছি।’
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের নয় মাস শেষ হতে চলেছে। আগামী জুন মাসে শেষ হবে বছর। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২২-২৩ অর্থবছর।
বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত জুলাই মাসে ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ হিসাবে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর আদায় বাড়ছে, যা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। অর্থবছরের শেষ দিকে রাজস্ব আহরণ আরও বাড়বে।’
‘সরকারের সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সম্প্রসারণ ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনেকটা গতিশীলতা ফিরে আসছে। আমদানি-রপ্তানি, রেমিটেন্স ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ছে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিগত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় এ প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং ব্যক্তিখাতের ঋণপ্রবাহের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। তাছাড়া, চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে উন্নতি সাধিত হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী তার প্রতিবেদনে বলেন, ‘করোনা অতিমারি মোকাবেলায় সরকার কর্মসংস্থানের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, শোভন কর্ম পরিবেশ ও সুস্থ শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
‘বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কারখানার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বিধিমালার বিধানাবলী এবং শ্রমিকদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।’
২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদনে বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম স্তম্ভ। সেসময় হতে বিগত ১৩ বছরে বর্তমান সরকার অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের মাইলফলক স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।’
পাশাপাশি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।