বিমানের ঢাকা-কানাডা রুট লাভজনক হবে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এও বলেছেন, ‘লাভজনক হবে না’ জেনেও এই রুট চালু করতে বিমানের আগ্রহের কারণ অর্থপাচার।
বাংলাদেশ বিমানের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট টানা ১৮ ঘণ্টা উড়ার রেকর্ড গড়ে ঢাকা থেকে কানাডা যাওয়ার পর দিনই এই প্রতিক্রিয়া জানালেন বিএনপি নেতা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘অ্যাসোসিয়েশনের অব ইঞ্জিনিয়ার্স-এ্যাব’ আয়োজিত এক আলোচনায় কথা বলছিলেন তিনি।
বিমানের কানাডা ফ্লাইট ছাড়াও পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলামের সাম্প্রতিক বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা।
মির্জা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন নিশ্চয়ই ঢাকা থেকে টরেন্টো (কানাডা) সরাসরি ফ্লাইট করেছে, একটা ট্রায়াল ফ্লাইট হয়েছে এখন চালু করবে। গতকালই বিমানের যারা কর্মকর্তা আছেন তারা বলছেন যে, এই ফ্লাইটটা কেন করা হলো তারা জানেন না। কারণ, এটা কোনো মতেই ভায়াবেল ফ্লাইট নয়।’
তিনি বলেন, ‘করা হয়েছে একটা কারণেই। বেগম পাড়াতে যারা যাতায়াত করেন তাদের সুবিধার জন্য অথবা সরাসরি এখান (বাংলাদেশ) থেকে পাচার করার জন্য, সুটকেইসে ভরে, ট্রাংকে ভরে পাচার করার জন্য।’
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের রাতে ঢাকা থেকে সরাসরি বিমানের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট যায় কানাডার টরেন্টোয়।
দেশের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা ভয়াবহ অবস্থায় আছি। আজকে দ্রব্যমূল্যের যে হিসাবটা আপনারা এখানে দিয়েছেন, দুর্নীতির যে হিসাবটা আপনারা দিয়েছেন এগুলো যদি সঠিকভাবে লক্ষ্য করা হয় তাহলে লোম শিউরে উঠে। যে একটা দেশ, যে দেশের মানুষ এত কষ্ট করে দিনরাত পরিশ্রম করে উপার্জন করছে, সেই দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে।
‘এটার কোনো জবাবদিহিতা নেই। পার্লামেন্টে এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠে না। কারণ এই পার্লামেন্টে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নাই।’
দেশের পরিস্থিতি পাল্টাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামার তাগিদও দেন ফখরুল। বলেন, ‘আমাদের সময় খুব কম। আমাদের দ্রুত সংগঠিত হতে হবে। আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তাকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমান বিদেশে নির্বসিত হয়ে আছেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে ...।’
আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারের সমালোচনা
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত পরশু পুলিশের একটা অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজি ও পুলিশ কমিশনার কিছু কথা বলেছেন-আমরা বিস্মিত হয়েছি, ক্ষুব্ধ হয়েছি। কী করে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তারা এই ধরনের সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক অশালীন এবং শিষ্টাচার বর্হিভূত কথা বলতে পারেন, এটা আমরা চিন্তা করতে পারি না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল গত কয়েকদিন ধরে নতুন নতুন যে তথ্য দিচ্ছেন, সেগুলো নিয়ে গত শনিবার রাতে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
বিএনপির এই দাবিতে ‘মিথ্যার বেসাতি’উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার সেদিন বলেন, ‘তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা, হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোষ হলো সত্য কথাটাও ঠিকমত বলতে পারে না। আর ওরা (বিএনপি) একটা কথা ১০ বার বলবে … মিথ্যা কথা … বলতে বলতে এই যে এখন একটা পার্টির খুব সিনিয়র নেতা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী না কি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এর চেয়ে হাস্যকর আর …।’
একই অনুষ্ঠানে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আইজিপি বলেন, ‘তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। দেশের অর্থনীতির ওপর অবরোধ আরোপ করতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা লবিস্ট নিয়োগ করছেন, জিএসপি বন্ধ করতে চিঠি লিখেছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক কথা-বার্তা বলা একেবারেই কনডাক্টের বাইরে, সেখানে একজন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং যিনি স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, যিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রাজনীতির মধ্যে, এখনও গণতন্ত্রের জন্য গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তার সম্পর্কে এই ধরনের অশালীন উক্তি করতে পারে-এটা আমরা ভাবতেও পারি না।
‘আপনারা মনে করবেন না যে, আওয়ামী লীগই শেষ, কোনো দিন শেষ হয় না। অবশ্যই পরিবর্তন হবে এবং সেই পরিবর্তনে আপনাদেরকে এই জবাবদিহি করতে হবে।’
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বলতে গিয়ে ফখরুল বলেন, আপনারা ‘সরকারের বেআইনি হুকুম’ তামিল করতে গিয়ে জনপ্রতিষ্ঠানকে আপনারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
‘এখন তাদের (সরকারি কর্মকর্তা) বলতে চাই, সরকারের বেআইনি হুকুম মানবেন না। বেআইনি হুকুম মানলে আপানাদের ওই অবস্থায় (নিষেধাজ্ঞা) পড়তে হবে।’
আয়োজন সংগঠন অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আ ন হ আখতার হোসেনের সভাপতিত্ব ও যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় ‘আওয়ামী লীগের অপশাসন, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি’ শীর্ষক এই আলোচনায় পেশাজীবী নেতা সেলিম ভুঁইয়া, কাদের গনি চৌধুরী, আশরাফ উদ্দিন বকুল, রফিকুল ইসলাম, আবদুল হালিম, ফখরুল আলমও বক্তব্য রাখেন।