রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে নেই বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সংকটে দেশের অর্থনীতিতে সাময়িক প্রভাব পড়েছে। এ যুদ্ধ কতটা দীর্ঘ হবে তার ওপর নির্ভর করবে দীর্ঘ মেয়াদে এর ফল কী হবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এ সংকট দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে এই মুহূর্তে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলবে না।
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সোমবার প্রশ্নোত্তরে পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রশ্ন উত্থাপন করেন ক্ষমতাসীন দলের সদস্য মো. সফিউল ইসলাম।
লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়া ও বেলারুশের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এই সংকটে জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবে এসবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এর ফলে প্রাকৃতিক গ্যাস, অপরিশোধিত তেল, সার, গম, নিকেল, অ্যালুমিনিয়াম ও ইলেকট্রিক পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফিনিশ গুডসের মূল্য বাড়তে পারে।
‘এই মূল্যবৃদ্ধি বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতিকে নিশ্চিতভাবে বাড়িয়ে দেবে। তেল-গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন খরচ বেড়ে দেশেও মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে।’
এই সংকট রাশিয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির অর্থ পরিশোধ নিয়েও জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি হিসেবে দুই হাজার ১৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ সময়ে বর্তমান ও আগের চুক্তি থেকে দুই হাজার ৮৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় হয়েছে।
একই দলের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত বিদেশ থেকে ১৩ হাজার ৪৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।’
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাভাইরাসের কারণে তা কমে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে। তবে করোনা প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা ও নিরলস কর্মতৎপরতায় বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তেমন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েনি; বরং মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।