১৯ বছর আগে লক্ষ্মীপুরে একটি হত্যার ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যে রায় দিয়েছিল, তাদের মধ্যে চারজনকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। বাকি ৭ জনকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এ মামলার ডেথ রেফারেন্স, ফৌজদারি আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে সোমবার এ রায় দেয় বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন এবং বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, জে আর খান রবিন, শাম্মী আক্তার ও মো. সামসুদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী বাপ্পী।
সাজা কমানোর কারণ উল্লেখ করে আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন নিউজবাংলাকে বলেন, “নিরপেক্ষ সাক্ষ্য দিয়ে অপরাধ প্রমাণ করতে না পারায় চার আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত।
‘তাদের নাম এজাহারে ছিল না। মামলার অন্য এক আসামির স্বীবারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই চার আসামির নাম আসলেও সাক্ষীদের জবানবন্দি তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে সমর্থন করেনি। যে কারণে তাদের খালাস দেয়া হয়েছে।’
চারজন হলেন, গোবিন্দপুর গ্রামের মোর্শেদ আলম, জগন্নাথপুর গ্রামের মাসুদ, মধ্য গোবিন্দপুর গ্রামের আবুল বাশার ও তিতারকান্দি গ্রামের কালা মুন্সি।
মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন দেয়ার কারণ উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল রাতে। হত্যায় আসামিদের উপস্থিতি প্রমাণিত হলেও কে কীভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে তা কোনো সাক্ষীর জেরা-জবানবন্দিতে স্পষ্ট না।
‘তাছাড়া দুজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা পরস্পরবিরোধী। যে কারণে আদালত রায়ে বলেছে, সবাইকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারাসহ ৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া খুবই কঠিন। তাই মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে তাদের যাবজ্জীবন দেয়া হলো।’
যাদেরকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়েছে, তারা হলেন, তিতারকান্দি গ্রামের আলম, মিরাজ, মঞ্জু, মামুন, ভুট্টো ওরফে আবদুস শহিদ এবং মহিন উদ্দিন এবং, পূর্ব রাজাপুরের মাঈন উদ্দিন।
২০০৩ সালের ৮ মার্চ রাতে সদর উপজেলার তিতারকান্দি গ্রামের যুবদলকর্মী বাবর মিয়াকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ভাই নুর আলম সদর থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাইদুর রহমান গাজী ১১ জনকেকে মৃত্যুদণ্ড এবং চারজনকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় দেন।
পরে বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে আসে। আর রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।