রাজধানীতে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গত ২৪ মার্চ রাতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
টিপু হত্যা মিশন চলার সময় এলোপাতাড়ি গুলিতে রিকশা আরোহী কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিও প্রাণ হারান। এরই মধ্যে ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন পেশাদার শ্যুটার মাসুম মোহম্মদ আকাশকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। আকাশকে শনিবার রাতে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
টিপু হত্যার পরদিন মামলা করেন তার স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি। ওই মামলার সূত্রে জানা যায়, হত্যার আগে ফোনে টিপুকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। বিষয়টির তদন্ত করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট। তবে টিপুর ঘনিষ্ঠ একজনের দাবি, হুমকি নয়, নিজের পরিচয় গোপন করে টিপুকে সতর্ক করেছিলেন তার এক শুভাকাঙ্ক্ষী।
ডলি মামলায় উল্লেখ করেন, ঘটনার ৪/৫ দিন আগে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী তার স্বামীকে ফোনে হত্যার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ডলি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার দুই দিন আগে সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় উনি (টিপু) আমাকে বলেন, তার কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি ফোন এসেছে। ফোন দেয়া ব্যক্তি বলেছেন, তার নাকি বিপদ, তাকে মেরে ফেলবে।
‘আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম নম্বরটা রেখেছে কিনা। উত্তরে আমাকে বলল নম্বরটা বন্ধ বলছে। এর পরদিন এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি মেয়রকে জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সুযোগ পাইনি। পরে ভাবলাম ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানের পর বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি প্রশাসনের সহযোগিতা নেব। কিন্তু সেই সুযোগটা আর হল না।’
টিপুর আস্থাভাজন ও মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. মাহবুবুল হক হীরক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমিও হুমকির বিষয়টি শুনেছি। তবে সরাসরি টিপু ভাইয়ের কাছে না। উনি খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন, যেকোনো বিষয় নিজের মধ্যেই রাখতে পছন্দ করতেন। আর ভাই এগুলোকে গুরুত্বও দিতেন না। এমন হুমকি তো কতই আসে।’
তবে টিপুর একটি বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, শবে বরাতের একদিন পর অপরিচিত নম্বর থেকে যে ফোনকলটি এসেছিল, তা হুমকি দিতে নয়, বরং সতর্ক করতে। ওই ফোনে তাকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক টিপুর ওই ঘনিষ্টজন।
টিপু ফোন কলটি পাওয়ার পরপরই ওই ঘনিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এই ব্যক্তি নিউজবাংলাকে বলেন, “ফোনে এক ব্যক্তি তার পরিচয় গোপন রেখে বলে, ‘আমি আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী, আমাকে চিনবেন না। আপনার সামনে বিপদ, আপনাকে মেরে ফেলবে, একটু সাবধানে থাকেন।’ এ কথা বলেই ওই ব্যক্তি ফোন কেটে দেয়।”
‘এরপর টিপু ফোন ব্যাক করলে নম্বরটিতে আর সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ওই ফোনে কোনো হুমকি দেয়া হয়নি। টিপুকে পছন্দ করে এমন কেউ তাকে হত্যার পরিকল্পনা জানিয়ে টিপুকে সতর্ক করতে চেয়েছিল। ওই ফোন পাওয়ার চার দিনের মাথায় টিপু খুন হয়। এখন তো মনে হচ্ছে হত্যার পরিকল্পনার সময় আশপাশেই টিপুর শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিটি ছিল। ওই ব্যক্তি টিপুর ভালো চেয়েই সতর্ক করার চেষ্টা করেছে।’
মামলায় হুমকির বিষয়টি উল্লেখ থাকায় শাহজাহানপুর থানা পুলিশসহ একাধিক বাহিনী তা যাচাইয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত হুমকির বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি কোনো বাহিনী।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি (ডলি) একজন রানিং কাউন্সিলর, সেই সঙ্গে টিপু সাহেবেরও প্রশাসনের সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক। সুবিধা-অসুবিধা সব কিছুই তো আমাদের জানান, তাহলে হুমকি পেলে আমাদের জানালেন না কেন?’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। তবে হুমকির বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য না। মেরে ফেলতে চাইলে হুমকি কেন দেবে, হুমকি দেয়া হয় তো ভয় দেখাতে।’