বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্র ইউনিয়ন নেতার ‘ধর্ষণ’ টিএসসির দখল করা কক্ষে

  •    
  • ২৭ মার্চ, ২০২২ ১৭:২৭

আকিফ আহমেদ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। টিএসসিতে ‘সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন’-এর অবৈধ দখলে থাকা কক্ষে ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্র ইউনিয়নের বহিষ্কৃত নেতা আকিফ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) যে কক্ষে ধর্ষণের ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই কক্ষ দীর্ঘদিন ধরে ‘সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন’-এর অবৈধ দখলে রয়েছে। টিএসসির ২০৫ নম্বর কক্ষটি ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক উইংকে কখনই বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে টিএসসি কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে অভিযুক্ত আকিফ স্বীকার করেছেন ওই কক্ষে প্রায় এক বছর আগে মদ্যপ অবস্থায় তিনি অভিযোগকারী তরুণীর বাধা উপেক্ষা করে যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যান। তরুণীর সঙ্গে তখন তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেছেন আকিফ।

আকিফ আহমেদ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আকিফকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন।

আকিফ নিউজবাংলাকে জানান, গত বছরের ৩ এপ্রিল টিএসসির দোতলার ২০৫ নম্বর কক্ষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ধর্ষণে অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আকিফ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যার সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে একটি কলেজের শিক্ষার্থী। এই ঘটনার সময় লকডাউন চলছিল। বিভিন্ন কাজের কারণে আমি প্রায়ই রাতে টিএসসিতে থাকতাম।

‘সেদিন রাত ১১টায় সেই রুমে আমি আর সে একা ছিলাম। তবে পাশের রুমে আরও কয়েকজন ছিল। সে সময় আমি ড্রাংক ছিলাম। এ অবস্থায় দুজনের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক হয়। তবে একটা পর্যায়ে সে আমাকে থামাতে চায়, কিন্তু আমি থামতে পারিনি। পরে সে আমাকে সরিয়ে দেয়।’

আকিফের দাবি, একপর্যায়ে তিনি (আকিফ) সংজ্ঞা হারান। মেয়েটি কক্ষ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় চেতনা হারানোর বিষয়টি পাশের কক্ষের লোকজনকে জানিয়ে যান। এরপর সকালে আকিফ জেগে মোবাইল ফোনে মেয়েটির মেসেজ দেখে রাতের ‘অস্বাভাবিকতা’ জানতে পারেন।

আকিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরপর আমি তার কাছে (তরুণী) ক্ষমা চাই। এভাবেই গত বছর বিষয়টি ঠিক হয়ে যায়। এই ঘটনার পরও আমাদের দেখা হয়েছে। আমরা আবার রিলেশন কন্টিনিউ করেছিলাম। সেই রিলেশন চার-পাঁচ মাস চলেছে। সর্বশেষ কিছু মাস আগে বিভিন্ন কারণে আমাদের ব্রেকআপ হয়।’

বিষয়টি নিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি নিউজবাংলা। তবে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের কাছে আকিফের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাবি শাখার সভাপতি শিমুল কুম্ভকার।

ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে ‘যথেষ্ট’ শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন বলে মনে করছেন আকিফ। তিনি বলেন, ‘সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছি, ঘটনা স্বীকার করেছি, এটার চেয়ে বড় আর কী হতে পারে। আমি স্বীকার না করলে তো এটি এতদূর গড়াত না।’

টিএসসির যে কক্ষে এই ঘটনা, সেই কক্ষ নিয়েও বিপাকে পড়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, কক্ষটিতে কোনো টেবিল নেই। একটি চেয়ার, একটি আয়না আর মেঝেতে একটি বিছানা পাতা। এক পাশে রয়েছে কিছু মশাল। আর দেয়ালে কয়েকটি পোস্টার সাঁটানো।

বরাদ্দ ছাড়াই কক্ষটি ‘সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন’-এর নামে দখলে রাখা এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার অভিযোগের বিষয়ে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের উপদেষ্টা এবং ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শিকদার মনোয়ার মোর্শেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। বর্তমানে ছুটি নিয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকার বাইরে আছি। ফিরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে বলতে পারব।’

ঘটনাটি গত বছরের জানালে তিনি নিউজবাংলার প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমি এ বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়েছি। আগের ঘটনা নিয়ে আমি কমেন্ট করতে পারব না। আপনি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

টিএসসির উপপরিচালক নজীর আহমদ সিমাব বলেন, ‘এই রুমে ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক উইং সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন বসত। তবে তাদের অফিশিয়াল কোনো ইয়ে (অনুমতি) ছিল না। এই রুমটায় আগে মূলত টিএসসির সাউন্ড সিস্টেম রাখা হতো। আমরা জয়েন করার আগে থেকে তারা এই রুমটাতে বসে।’

তিনি বলেন, ‘আমিও শুনেছি কী একটা নাকি দুর্ঘটনা হয়েছে সেখানে। আসলে তেমন জানি না।’

কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাদের আমরা বৈধভাবে রুম বরাদ্দ দিই, তারা কোনো অনিয়ম করলে আমরা ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রাখি। কিন্তু তারা তো সে রকম কোনো সংগঠন না।’

টিএসসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ আলী আকবর নিউজবাংলাকে বলেন, এ রকম ঘটনা আমার কানে আসেনি। কেউ যদি এ বিষয়ে অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের নামে কাউকে টিএসসির কোনো রুম বরাদ্দ দেয়া হয়নি।’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমি এ ধরনের একটি ঘটনার খবর জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ, সেটা আইনগত বিষয়।

‘এই ধরনের ঘটনা সত্যি হয়ে থাকলে সেটি খুবই বড় অপরাধ। আর রুমের বিষয়ে আমি টিএসসি-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।’

টিএসসির আলোচিত কক্ষটি সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদ।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির সভাপতি আখতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, টিএসসির একটি কক্ষে এ রকম ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্যও অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ঘটনা প্রমাণ করে, প্রশাসনের বরাদ্দ কক্ষে নারী শিক্ষার্থীরাই নিরাপদ নয়‍। এ অবস্থায় অবিলম্বে সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের দখল করা কক্ষটি বাতিল করে টিএসসিকে সব মত ও পথের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

টিএসসির কক্ষ দখলে রাখার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকে।

আবদুল্লাহ হীল বাকি নামে মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘টিএসসির রুম দখল করে এভাবে একজন মেয়েকে এখানে ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন করবে, এসব কীভাবে মেনে নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা? টিএসসিতে ছাত্র ইউনিয়ন কীভাবে রুম দখল করে? ছাত্রলীগ, ছাত্রদল কিংবা অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন তো কখনও টিএসসিতে রুম দখল করেছে বলে শুনিনি।’

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান শুভ লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির একটি রুমে এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে। রুমটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে ছাত্র ইউনিয়নের একটি সংগঠন সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন। ধর্ষণের এতদিন পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

এ বিভাগের আরো খবর