চট্টগ্রামে খাল ও নালায় পড়ে গত এক বছরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ আছেন একজন।
সবশেষ রোববার সকালে বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের একটি উন্মুক্ত নালা থেকে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এর আগের দিন শনিবার বিকেল ৪টায় পুরাতন চান্দগাঁওয়ে পাঠানিয়া গোদা এলাকায় দুই নারীর সঙ্গে হাঁটার সময় ফুটপাতের একটি গর্তে পড়ে যায় এক শিশু। তাৎক্ষণিকভাবে ওই শিশুকে উদ্ধার করেন দুই নারী। এ ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় মেয়েটি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এসরারুল হক জানান, কিছুদিন আগেই ফুটপাতের ওই অংশে টাইলসের কাজ হয়েছে। কিছু কাজ হয়তো বাকি রয়েছে। দ্রুতই ফুটপাতের গর্তগুলো ভরাট করা হবে।
চট্টগ্রাম নগরে মোট খালের সংখ্যা ৫৭টি, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৩৬টি খাল ও ৩০২ কিলোমিটার নালা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাকি ২১টি খাল ও ৬৪৮ কিলোমিটার নালা।
গত ৬ বছরে এসব উন্মুক্ত নালা ও খালে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। এর মধ্যে দুজনের খোঁজই মেলেনি। কেবল ২০২১ সালেই মারা গেছেন চারজন, যাদের মধ্যে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বরে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া। তার মৃত্যুর আগে খালে পড়ে প্রাণ হারান আরও তিনজন। এর মধ্যে ২৫ আগস্ট মুরাদপুর এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় পা পিছলে নালায় পড়ে তলিয়ে যান সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। পরে তার লাশটিও পাওয়া যায়নি।
একই বছরের ৩০ জুন মেয়র গলির চশমা খালে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর মিছিলে সর্বশেষ যুক্ত হয় এক পথশিশু। গত ৬ ডিসেম্বর চশমা খালে বোতল কুড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয় পথশিশু কামাল উদ্দিন।
এত এত দুর্ঘটনা আর মৃত্যুর পরও উন্মুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ নালা-নর্দমা, ফুটপাত ও খাল এখনও অনিরাপদ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার মোট ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ৫ হাজার ৫২৭টি, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার।
জানুয়ারিতে এসব স্থান সুরক্ষিত করার কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা অসমাপ্ত। এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। তবে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে মেয়াদ পূর্তির এক বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ খালপাড়ে প্রায় ১৫ হাজার বর্গফুট রক্ষাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।
রোববার জানতে চাইলে মেয়র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ৩৬টি খাল সিডিএর অধীনে। সেগুলোতে নিরাপত্তা প্রাচীরের কাজ তারা করবে। তবে বাকি খাল ও নালায় নিরাপত্তা প্রাচীরের কাজ আমরা চলমান রেখেছি। বর্ষা মৌসুমের আগেই সেগুলোর কাজ শেষ হবে।’
সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের ৬৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি খালের কাজ চলতি বছরের জুনেই পুরোপুরি শেষ হবে। এরপর তা সিডিএকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। বাকি ১৮ খালের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।’