মামলা থেকে মুক্তি পেতে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার কনট্রাক্ট নিয়েছিলেন মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। হত্যার নির্দেশদাতা টিপুর নাম জানানোর পর ঘটনার তিনদিন আগে তিনি রেকি শুরু করেন। আর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি সীমান্ত জেলা জয়পুরহাটে চলে যান। শনিবার রাতে বগুড়া শহর থেকে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
রোববার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘আকাশ শুধু টিপুকেই হত্যার কনট্রাক্ট নিয়েছিল। কিন্তু তার গুলিতেই ঘটনাস্থলে থাকা রিকশারোহী কলেজছাত্রী প্রীতি নিহত হন। ঘটনার পরদিন আকাশ জানতে পারে যে সেখানে টিপু ছাড়াও আরেকজন নিহত হয়েছেন।’
কিলিং মিশন নিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের তিনদিন আগে আকাশ ও তার এক সহযোগী টার্গেট হিসেবে টিপুর নাম জানতে পারে। এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য কাটআউট সিস্টেমে (চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করা) একটি মোটরসাইকেল ও পিস্তল পেয়েছিল সে। তখন থেকে সে তার সহযোগীকে নিয়ে রেকি শুরু করে। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন বুধবারও তারা ওই মোটরসাইকেল নিয়ে মতিঝিলে এজিবি কলোনির ভেতরে অবস্থান নেয় টিপুকে হত্যার জন্য। সেদিন সুযোগ না পাওয়ায় পরদিন তারা হত্যার মিশন শেষ করে।’
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ঘটনার পরদিন একটি গাড়ি নিয়ে আকাশ জয়পুরহাটে চলে যায়। এদিকে পুলিশ নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ওই গাড়ির সংশ্লিষ্টদের আটক করে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জয়পুরহাটে আকাশের অবস্থান নিশ্চিত হয়। দেশ ছেড় পালাতে সে জয়পুরহাটে অবস্থান করছিল। কিন্তু শনিবার রাতে সে জয়পুরহাট থেকে বগুড়া শহরে আসে। সেখান থেকে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় গোয়েন্দারা তাকে আটক করে।’
অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ‘অস্ত্রটি হলো হত্যাকাণ্ডের একটি আলামত। হত্যাকাণ্ডের পর আমরা প্রথমেই শুটারকে ধরার ওপর জোর দিয়েছি। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে আমরা শুটার সম্পর্কে নিশ্চিত হই এবং পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এখন তার কাছ থেকে সব তথ্যই পাওয়া যাবে।’
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আসামি স্বীকার করেছে যে সে বর্ডার ক্রস করে পালিয়ে যাচ্ছিল। সে ধারণা করেছিল ধরা পড়ার আগেই দেশ ছাড়তে পারবে। ধরা পড়ার পর সে উল্টো গোয়েন্দাদের দিকে প্রশ্ন ছোঁড়ে- আমাকে ধরলেন কিভাবে, আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম?’
আকাশ কত টাকায় টিপুকে হত্যার কনট্রাক্ট নিয়েছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, ‘সব কনট্রাক্ট টাকার বিনিময়ে হয় না। সে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে লেখাপড়া করেছে। তার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। আকাশের দাবি, তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এ কারণে সে বাড়ি যেতে পারে না। পরিবার থেকেও তাকে বলে দেয়া হয়েছে এসব ঝামেলা শেষ করে তারপর বাড়ি যেতে।
‘টিপুকে হত্যার নির্দেশদাতারা তাকে আশ্বস্ত করেছে যে এই কাজটা করে দিলে তার মামলার বিষয়গুলো সলভ করে দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে আকাশ আমাদের এসব তথ্য জানিয়েছে, এখন আমাদের ভেরিফাই করে দেখতে হবে।’
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আকাশ প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে যে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে নেপথ্যের কারণ বা মদদদাতা কারা তা জানতে আরও তদন্ত প্রয়োজন। কারণ আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল শ্যুটারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা। তা সম্ভব হয়েছে। এখন নেপথ্যের কারণ জানতে আমাদের আরও তদন্ত করতে হবে। এজন্য তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।