টিসিবির পণ্য চুরি করে খোলাবাজারে বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয়রা।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রোববার বেলা ১১টায় অবস্থান নিয়ে প্রথমে মানববন্ধন করেন সাধারণ মানুষ। পরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন তারা।
পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেয়া হয়। এ সময় শহরের সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
এর আগে ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে বোর্ডবাজারের মা জেনারেল স্টোরের গুদাম থেকে টিসিবির তেল, চিনি, ডাল জব্দের পর মো. শাহীন নামে মুদি দোকানিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত রোববার (২০ মার্চ) রাতে একজন ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে টিসিবির পণ্য মজুতের বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ বোর্ডবাজারের এক ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে অভিযান চালিয়ে টিসিবির মোড়কযুক্ত ৯২ লিটার তেল, ৮৬ কেজি চিনি ও ৮২ কেজি মসুর ডাল জব্দ করে। এ সময় গুদামের মালিক ব্যবসায়ী শাহীনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘পরদিন সোমবার দুপুরে শাহীনসহ অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করে কালোবাজারি আইনে গাছা থানায় মামলা করা হয়।’
বিক্ষোভে অংশ নেয়া ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাহমিনা ও তানিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি দিয়ে টিসিবির পণ্য দিচ্ছেন। অথচ গরিবের সেই হক মেরে খাচ্ছেন সরকারদলীয় কাউন্সিলর মামুন মণ্ডল ও তার লোকজন। তারা গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত টিসিবি পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
কফিল উদ্দিন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘কাউন্সিলর কার্যালয় প্রাঙ্গণে ট্রাকে করে নির্ধারিত ৫২৫ জন কার্ডধারীর মধ্যে ৩৩৫ জনের কাছে পণ্য সরবরাহ করা হয়। বাকি পণ্য কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ দুজন ব্যক্তি কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।’ কাউন্সিলরের প্রত্যক্ষ মদদে এই অপকর্ম করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জারা-সারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ আহমেদ শান্ত জানান, রোববার তিনি কাউন্সিলর কার্যালয় প্রাঙ্গণে ট্রাকে করে নির্ধারিত ৫২৫ জন কার্ডধারীর মধ্যে ৩৩৫ জনের কাছে পণ্য সরবরাহ করেন। বাকি কার্ডধারীদের না পেয়ে সন্ধ্যার পর তিনি ১৯০ জন কার্ডধারীর পণ্য ওয়ার্ড সচিব আবু সাঈদের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে কাউন্সিলরের কাছ থেকে বিক্রির প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
টিসিবির পণ্য চুরি করে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ তদন্তে গত ২৩ মার্চ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব আব্দুল হান্নানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা কাজী বজলুর রশিদ ও গাছা জোনের (অঞ্চল-৩) নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা শাহরীন মাধবী।
তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ কমিটি গত বুধবার মা জেনারেল স্টোরের বোর্ডবাজারের দোকান ও গোডাউন সিলগালা করেছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং টিসিবি পণ্য যে প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান ও এর গোডাউন সিলগালা করা হয়েছে।
‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডলের কাছে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তদারকি করছে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি। তদন্তে যেই দোষী প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল। তিনি নিউজবাংলা বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করছে। এ ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
‘যদি বিন্দু পরিমাণ সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আমাকে যে শাস্তি দেয়া হবে, তা মাথা পেতে নেব। আর যারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’