বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেয়ার ছেড়ে সুকুক বন্ডে আগ্রহী ব্যাংক

  •    
  • ২৭ মার্চ, ২০২২ ১১:০০

২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ২৬টি ব্যাংকের টাকায় তহবিলের আকার ছিল ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সে সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে তহবিল বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। আর বিনিয়োগ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকায়ই কেনা হয়েছে সুকুক বন্ড। অর্থাৎ বিনিয়োগ ৯৫৩ কোটি বাড়লেও শেয়ার বিক্রি করে বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংক। শুধু বিশেষ তহবিল নয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগযোগ্য সাধারণ তহবিলেরও বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এই বন্ডে।

পুঁজিবাজার চাঙা করতে ব্যাংকগুলোকে যে বিশেষ তহবিল গঠনের অনুমতি দেয়া হয়েছে, তার আকার এক বছরে বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তবে তহবিলের প্রায় অর্ধেক এখনও অলস ফেলে রাখা হয়েছে।

এই এক বছরে এই বিশেষ তহবিল থেকে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। তবে এই সময়ে পুঁজিবাজারের শেয়ারে বিনিয়োগ কমেছে। কারণ বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে।

২০২০ সালে পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকা করে তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সব ব্যাংক এই পরিমাণ তহবিল করেনি। কোনো কোনো ব্যাংক এই তহবিলে টাকা দিতে আগ্রহই প্রকাশ করেনি।

দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা এখন ৬১টি। সবাই ২০০ কোটি করে টাকা দিলে তহবিলের আকার হতে পারত ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, পুঁজিবাজারের জন্য ৩৬ ব্যাংক এখন পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

এর মধ্য থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। হাতে আছে এখনও ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

এই তহবিল ও বিনিয়োগের বেশির ভাগই আবার হয়েছে গত এক বছরে।

চলতি মাসের প্রথম দিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকের পর ৩৩টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যারা এখনও তহবিলে টাকা দেয়নি, তারা টাকা দেবে, আর যারা টাকা দিয়েও বিনিয়োগ করেনি, তারা বিনিয়োগে যাবে।

এরপর ব্যাংকগুলো কতটা বিনিয়োগ করেছে, নতুন কারা তহবিলে টাকা জমা দিয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি এখনও।

তহবিল গঠন করলেও বিনিয়োগ কম হওয়ায় পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে ব্যাংকগুলোকেও চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। চিঠিতে সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংকগুলো চাইলে ৫০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সই করা একটি চিঠি গত বুধবার ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে।

ব্যাংকের গঠিত তহবিলের পুরোটা বিনিয়োগ করলে বাজার আরও স্থিতিশীল হবে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক খাতকে অনেকে নিরাপদ মনে করে। এ জন্য শেয়ারবাজার চাঙা করতে ব্যাংক খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত।’

তহবিল ও বিনিয়োগে গতি এক বছরে

গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৩২টি ব্যাংকের চাঁদায় বিশেষ তহবিলের আকার ছিল ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয় ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।

চার মাস পর মার্চে সেটি বেড়ে হয় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে তহবিল বেড়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।

ঠিক এক বছর আগে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ২৬টি ব্যাংকের টাকায় তহবিলের আকার ছিল ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সে সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।

অর্থাৎ গত এক বছরে বিশেষ তহবিলের আকার বেড়েছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর বিনিয়োগ বেড়েছে ৯৫৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে আটটি ব্যাংক গঠিত তহবিলের ৮০ থেকে প্রায় শতভাগ বিনিয়োগ করেছে। ১৯টি ব্যাংক গঠিত তহবিলের ৫০ শতাংশই বিনিয়োগ করেছে। আর বাকিগুলোর বিনিয়োগ আরও কম।

বেশির ভাগ বিনিয়োগ সুকুক বন্ডে

পুঁজিবাজারের জন্য ব্যাংকগুলোর গঠন করা বিশেষ তহবিলের ৭০ শতাংশ সৌর, বায়ু, জল, বায়োমাসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে আনা গ্রিন সুকুক বন্ডেও বিনিয়োগে সুযোগ দিয়ে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর এক সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তখন এই বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০২৫ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত করা হয়। বলা হয়, ব্যাংকগুলোর এই বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে।

এই তহবিলের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের এক হাজার ৪০০ কোটি টাকাই গেছে সম্প্রতি তালিকাভুক্ত হওয়া বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইস্তিসনায়।

সুকুকে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ হয়েছে দুই হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা বন্ডটির মোট আকারের ৭৪ শতাংশ।

অর্থাৎ শেয়ারবাজারের জন্য গঠিত বিশেষ তহবিলের বাইরে আরও ৮০০ কোটি টাকার বেশি নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো।

বিশেষ তহবিলের শুরুতে যা বলা হয়

২০২০ সালের শুরুতে পুঁজিবাজারের টানা দরপতন সামাল দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তখন বলা হয়েছিল, তহবিলের অর্থ শুধু পুঁজিবাজারের ২১৭টি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে, যা পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য ঋণ হিসেবে তহবিলের ২০ শতাংশ দেয়া যাবে।

আবার পর পর তিন বছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে, এমন শেয়ারে বিনিয়োগের শর্ত বেঁধে দেয়া হয়। সুকুকে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্টত সেই পথ থেকে সরে এসেছে।

বলা হয়েছিল, অন্য ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিওর জন্য ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য তহবিলের ১০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেয়া যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর