বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্ক্যানার অচল: নষ্ট হচ্ছে সবজির রপ্তানি বাজার

  •    
  • ২৭ মার্চ, ২০২২ ০৮:৪২

২০২০-২১ সালে বাংলাদেশ এক হাজার ২৯ কোটি টাকার শাক-সবজি ও ফল রপ্তানি করেছিল৷ রপ্তানির এই পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। স্ক্যানার নষ্ট থাকায় উল্টো রপ্তানি বাজারই হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে শাক-সবজি রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের বাজার বড় হচ্ছে।

ইউরোপের বাজারে সবজি রপ্তানিতে প্রধান শর্ত নির্দিষ্ট মান নিশ্চিত করা। এ জন্য রপ্তানি পণ্য শতভাগ স্ক্যান করা বাধ্যতামূলক। আর এই রপ্তানি কার্যক্রম বাধামুক্ত রাখতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে রয়েছে দুটি স্ক্যানার। অথচ দুটি স্ক্যানারই এখন অচল।

একটি স্ক্যানার অচল হয়ে আছে দীর্ঘ এক বছর ধরে। আরেকটি দিয়ে কোনোক্রমে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছিল। সেটিও অচল দুই সপ্তাহ ধরে। এতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাজ্যে সবজিসহ কৃষিপণ্য পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। সবজি রপ্তানি বন্ধ থাকায় গত ১৫ দিনে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

২০২০-২১ সালে বাংলাদেশ এক হাজার ২৯ কোটি টাকার শাক-সবজি ও ফল রপ্তানি করেছিল৷ রপ্তানির এই পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। স্ক্যানার জটিলতায় উল্টো রপ্তানি বাজারই হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০২০-২১ সালে বাংলাদেশ এক হাজার ২৯ কোটি টাকার শাক-সবজি ও ফল রপ্তানি করেছিল৷ রপ্তানির এই পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ফাইল ছবি

অন্যদিকে প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে শাক-সবজি রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের পণ্য সরবরাহ না থাকায় সেই বাজারটা ওই দুই দেশ দখল করে নিচ্ছে। তাদের বাজার বড় হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাৎক্ষণিক আর্থিক ক্ষতির চেয়েও বড় যে ক্ষতিটা হচ্ছে তা হলো সবজির রপ্তানি বাজার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের সরবরাহ না পেলে ক্রেতারা অন্য দেশের সবজির দিকে ঝুঁকে পড়বে। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় তারা আর বাংলাদেশের সবজি নিতে চাইবে না। আর ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে অনেক সময় লেগে যাবে। তারপরও পুরোটা উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

ফল ও সবজি রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিমানবন্দরের স্ক্যানার প্রায় সময়ই নষ্ট থাকে। এ জন্য কৃষিপণ্য নিয়ে তাদের বিপদে পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই রপ্তানিকারকরা পণ্য নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছার পর জানতে পারেন যে স্ক্যানার নষ্ট। এতে করে পণ্য রপ্তানি করতে না পেরে তাদের লোকসানে পড়তে হয়। আবার রপ্তানি উপযোগী পণ্য বাজার পণ্যের বেশি দামে কিনতে হয় তাদের। অথচ এসব রপ্তানিকারকের অধিকাংশই স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী।

মাঝে মাঝেই নষ্ট হয় স্ক্যানার

রপ্তানিকারকরা জানান, বিমানবন্দরে মোট চারটি স্ক্যানার রয়েছে। এর মধ্যে দুটির স্ক্যান যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত হয়। যে দুটির অনুমোদন রয়েছে তার একটি আবার এক বছর ধরে অচল। সেটি মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যটি দিয়ে কাজ চললেও টানা ব্যবহারে সার্বক্ষণিক সচল থাকে না। গত এক বছরে এটি চারবার নষ্ট হয়েছে। সবশেষ দুই দফায় এক মাসের মতো নষ্ট থেকেছে এটি। গত দুই সপ্তাহ ধরে অচল থাকা স্ক্যানারটি কবে নাগাদ ঠিক হবে তারও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কৃষিপণ্যের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই যায় যুক্তরাজ্যে। শাহ আমানত বিমানবন্দরে রপ্তানির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সবজির প্যাকেট। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্ক্যানার টাইম টু টাইম নষ্ট হচ্ছে। একবার নষ্ট হলে বিদেশ থেকে পার্টস এতে ঠিক করা হয়। তাতে কত দিন লাগবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। সংশ্লিষ্টরা আপডেট কোনো তথ্য দিতে পারেন না।

‘এর আগে দুই দফায় ১৭ ও ১২ দিন বন্ধ ছিল স্ক্যানার। এ দফায় তো ১৫ দিন হতে চলল। বছরের পর বছর এ সমস্যা হচ্ছে। সমস্যাটি কেন এভাবে জিইয়ে রাখা হচ্ছে তা আমাদের মাথায় আসে না। কেন একাধিক স্ক্যানারের ব্যবস্থা করা হয় না তা-ও আমাদের বোধগম্য নয়।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রপ্তানির জন্য সবজি সংগ্রহে বাড়তি শ্রম ও খরচ আছে। রপ্তানিকারকরা মাঠ থেকে বাড়তি দামে সবজি সংগ্রহ করে তা বাছাই ও পরিষ্কার করেন। পরে তা প্যাক করে এয়ারপোর্টে নিয়ে এসে জানতে পারেন যে মাল ফেরত নিয়ে যেতে হবে। কারণ স্ক্যানার নষ্ট। এ অবস্থায় ওই পণ্য নষ্ট হয়।

‘কয়েক বছর ধরেই এমন হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা করা তো তাদের দায়িত্ব। কারণ প্রতি কেজিতে সিভিল এভিয়েশন ছয় থেকে আট সেন্ট রাজস্ব পায়। বৈদেশিক মুদ্রাও আসে। তারপরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কোনো নজর নেই।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিষয়টি অনেকের কাছে মামুলি বিষয় মনে হতে পারে। তারা ভাবতে পারেন যে এক বা দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকলে কী আসে যায়। কিন্তু রপ্তানিকারকদের দিক থেকে দেখলে এটা অনেক বড় ক্ষতি। আমদানিকারকরা তো আমাদের জন্য বসে থাকবে না। তারা অন্য দেশ থেকে পণ্য নেবে। এতে আমাদের বাজার নষ্ট হয়ে যায়। আর একবার হাতছাড়া হলে বাজার পুনরুদ্ধার করাটা খুবই কঠিন।’

রপ্তানি কার্যক্রম বাধামুক্ত রাখতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে রয়েছে দুটি স্ক্যানার। দুটি স্ক্যানারই এখন অচল। ফাইল ছবি

ক্ষতির ধরন

বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে দৈনিক ১০০ টনের মতো কৃষিপণ্য বিভিন্ন দেশে যায়। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই যায় যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যে দিনে ৫০ টন ধরে হিসাব করলেও লোকসানের পাল্লাটা অনেক ভারী। প্রতি কেজি পণ্যে গড়ে ৩ ডলার আয় হয়। সে হিসাবে গত ১৩ দিনে কমপক্ষে ১৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রপ্তানি বন্ধ থাকতে পারে আরো ১৪ দিন৷ সে হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

সরকারও প্রতি কেজিতে গড়ে ৭ সেন্ট রাজস্ব হারাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা রপ্তানি বাজার ধরে রাখার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।

স্ক্যানারের সংকট কেন

শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, মোট চারটি স্ক্যানার মেশিন রয়েছে একই মানের। দুটি নতুন। দুটি পুরোনো। পুরোনোগুলোর একটি অচল। বাকি তিনটি সচল। পুরোনো মেশিনগুলোর স্ক্যানের ফলাফলই গ্রহণ করে যুক্তরাজ্য।

প্রতিটি স্ক্যানার স্থাপন করার পর সেটির কর্মক্ষমতার বিভিন্ন তথ্য ও ফলাফল যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হয়। অনুমোদন পেলেই সেগুলোতে স্ক্যান করে পণ্য পাঠানো যাবে। নতুন দুটি মেশিনের অনুমোদনের জন্য তথ্য পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তা দীর্ঘদিন ধরেই আটকে আছে। তাই সংকট যাচ্ছে না। অথচ একই তথ্যের ভিত্তিতে ইইউ নতুন মেশিনের অনুমোদন দিয়েছে। সেগুলোর স্ক্যানের ওপর ভিত্তি করে পাঠানো পণ্য গ্রহণও করছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এস এম তৌহিদুল আহসান বলেন, ‘স্ক্যানার নষ্ট হওয়ায় বিকল্প হিসেবে আমরা এক্স-রে মেশিন দিয়ে স্ক্যান করে পণ্য পাঠাই। কিন্তু এ মেশিনের স্ক্যানের অনুমোদন ইউকে দেয়নি। তবে ইইউ অনুমোদন দিয়েছে। ফলে ইউকের অপশন কমে গেছে আমাদের। ইউরোপ বা অন্য দেশে সমস্যা হচ্ছে না।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু কাতার এয়ারওয়েজের মাধ্যমে কিছু সবজি রপ্তানি হচ্ছে৷ কারণ দুবাই এয়ারপোর্টে ওই স্ক্যানার আছে৷ এয়ারলাইনসটি তাতে কৃষিপণ্য স্ক্যান করতে পারে। তবে তাতে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে৷ দেশের স্ক্যানার অচল হওয়ায় প্রায় ২০০ রপ্তানিকারকের মাথায় হাত পড়েছে। এর সঙ্গে যে কৃষকরা রপ্তানিযোগ্য শাক-সবজি উৎপাদন করেন, তারাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

এ বিভাগের আরো খবর