বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করা শুরু করেছে দলটির নেতারা। হঠাৎ করে খালেদাকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা দাবির বিষয়টি হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
বলেছেন, আমাদের একটা পার্টির সিনিয়র নেতারা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এটা হাস্যকর।
শনিবার বিকেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
একই সঙ্গে এ সময় মুজিববর্ষ স্মারকগ্রন্থ ‘অনশ্বর পিতা’র মোড়ক উন্মোচন ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘জাতির পিতার ৭ মার্চ যেভাবে বলেছেন এর পরে ফরমালি আর স্বাধীনতার ঘোষণার তেমন কোনো প্রয়োজন ছিল না। হয়তো আন্তর্জাতিক কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে জাতির পিতা এটি ঘোষণা করেছেন। রাজারবাগে যে পুলিশ কনস্টেবলরা গুলি করেছিল, কোন ঘোষণা তাদের কে উজ্জীবিত করেছিল?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি দলের নেতারা বলেন যে, মানুষ নাকি দিকভ্রান্ত হয়েছিল। মানুষ বুঝতে পারছিল না কি করবে। তাহলে রাজারবাগের পুলিশ কি কীভাবে বুঝেছিল, সারা বাংলাদেশের পুলিশ কীভাবে বুঝেছিল কী করতে হবে। আসলে মিথ্যা কথা বলতে বলতে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যায়, যেন মনে হয় এটাই সত্য।’
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের একটা পার্টির সিনিয়র নেতারা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এটা হাস্যকর। যাকে তার স্বামী পরিত্যক্ত করেছিল পাকিস্তানের ওখানে কি করছ...। সেটা আর না বলি। কিন্তু সত্য জিনিস যেটা সেটা কিন্তু দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
গতকাল শুক্রবার সকালে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, বেগম জিয়া মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে অষ্টম রেজিমেন্টের সৈন্যদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
সে সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে তারেকের ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২০ নভেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তার বয়স ছিল সাড়ে তিন বছরের কম। তার অবদান কী সেটিও বিএনপি স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
৭ মার্চের ভাষণই পুলিশকে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেছিল বলে দাবি করেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ প্রমাণ করেছে যে, আমরা ৭ মার্চের ভাষণের শপথ নিয়েছিলাম দেশমাতৃকার জন্য প্রয়োজন বোধে রক্ত দিব, জীবন দিব এবং সেই সত্যের বহিঃপ্রকাশ কিন্তু সারা বাংলাদেশেই ঘটেছিল। শুধু রাজারবাগ পুলিশ লাইন নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজারবাগ থেকে ওয়ারলেসে সারা দেশে ঘোষণা হয়েছিল, রাজারবাগে আক্রমণ হয়েছে। রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইপিআর সব জায়গায় আক্রমণ হলো। তখন যুদ্ধের জন্য একেবারে প্রস্তুতির চূড়ান্ত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জেলায় পুলিশ লাইনের যত অস্ত্র ছিল সব অস্ত্র মানুষকে দেয়া হয়েছে, সব গুলি তাদের দেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ তোলেন এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনারা সবাই জানেন, আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথাটি বলেন, সাসটেইনেবল উন্নয়নের জন্য সাসটেইনেবল ল অ্যান্ড অর্ডার ও নিরাপত্তা দরকার। চিন্তা করেন যদি হলি আর্টিজানের ঘটনাটি আরেকবার ঘটত, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের কোথায় থাকতো? সব মেগা প্রজেক্ট যেগুলো এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে, একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এদেশে কাজ করত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দুজন পুলিশ সদস্য জীবন দিয়ে আমাদের দেশকে রক্ষা করে গেছেন, এই অরাজক পরিস্থিতি থেকে এবং আমাদের অনেক সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশকে এই জঙ্গি সন্ত্রাস থেকে যে মুক্ত করেছেন। আগুন সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করেছেন। আমরা তাদের বীরত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।’