বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবিতে শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে মাথা ফাটাল ‘ছাত্রলীগ’

  •    
  • ২৬ মার্চ, ২০২২ ১৭:৫৭

আখলাকুজ্জামান অনিক বলেন, ‘আজ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে আমি রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। এসময় কয়েকজন ছেলে আমার রুমে ঢুকে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। এরপর তারা আমাকে জোর করে রুম থেকে বের করলে রুমের বাইরে আগে থেকেই ওঁতপেতে থাকা ১০-১২ জন আমার ওপর হামলা করে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একই হলের কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে।

স্নাতকোত্তরের ওই শিক্ষার্থীকে রক্ষা করতে গেলে মারধরের শিকার হয়েছেন তারই রুমমেট চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী।

শনিবার সকালে হলের পদ্মা ব্লকের ২০১০ নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আখলাকুজ্জামান অনিক এবং তার রুমমেট ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুইরেন্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজিব আহমেদ রাজ।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

তবে ভুক্তভোগী অনিক জানিয়েছেন, মাথা ফেটে যাওয়ায় তার আটটি সেলাইয়ের প্রয়োজন হয়েছে।

মারধরের ঘটনায় ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিলেও কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

হামলায় আহত অনিকের রুমমেট রাজিব আহমেদ। ছবি: নিউজবাংলা

এরা হলেন অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সফিউল্লাহ সুমন পিটার, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির আল হাসান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুর রাশেদ নাইম এবং মাসফি উর রহমান।

এরা সবাই হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং হল ছাত্রলীগের সভাপতি সজিবুর রহমানের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

মারধরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আখলাকুজ্জামান অনিক বলেন, ‘আজ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে আমি রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। এসময় কয়েকজন ছেলে আমার রুমে ঢুকে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। এরপর তারা আমাকে জোর করে রুম থেকে বের করলে রুমের বাইরে আগে থেকেই ওঁতপেতে থাকা ১০-১২ জন আমার ওপর হামলা করে।’

তিনি বলেন, ‘এসময় তাদের হাতে থাকা স্ট্যাম্প দিয়ে এবং কিল, ঘুষি, লাথি মেরে আমার ওপর আক্রমণ করে। একপর্যায়ে একজনের স্টাম্পের আঘাতে আমার মাথা ফেটে যায়। পরে আমি আমার বন্ধুদের সহযোগিতায় ডিপার্টমেন্টে আসি এবং সেখান থেকে শিক্ষকদের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে চিকিৎসা নেই।’

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘তারা যখন আমাকে মারছিল তখন তাদের কথা শুনে বুঝতে পারি আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, গত ২৪ তারিখ সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমি নাকি উক্ত হামলাকারীদের একজন মাসফি উর রহমানকে হেনস্তা করেছি এবং সেটির দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেছি, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

অনিক বলেন, ‘গত ১০ মার্চ থেকে আমাকে এম.এ ২য় সেমিস্টারের উচ্চতর অভিনয় অনুশীলনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা ল্যাবে (নাটমণ্ডল অডিটোরিয়াম) বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত আমাকে এখানে এই সময়ে উপস্থিত থাকতে হবে। সুতরাং ২৪ তারিখ সন্ধ্যায় আমার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার কোন সুযোগই ছিল না।’

ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী বলেন, “এর আগে গতকাল ক্লাসের বিরতিতে আমি হলে গোসল করতে গেলে দ্বিতীয় বর্ষের মাসফি উর রহমান (অভিযুক্ত) এসে আমাকে সালাম দিয়ে বলে, ‘ভাই, আমাকে চিনতে পেরেছেন? ওই যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে.....’ তখন আমি তাকে বলি, না ভাই, তোমাকে আমি চিনতে পারিনি। তোমার কোথাও হয়ত ভুল হচ্ছে।’

মারধরের ঘটনায় বিচার চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছিরকে লিখিত অভিযোগ দিবেন বলে জানিয়েছেন আখলাকুজ্জামান অনিক।

তিনি বলেন, ‘অপরাধ না করেও শিক্ষাজীবনের শেষে এসে জুনিয়রদের হাতে এরকম মারধরের শিকার হব এটা আমি মেনে নিতে পারছি না৷ আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এ ঘটনার আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’

যা বলছেন অভিযুক্তরা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসফি উর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই ভাইকে (অনিক) চিনিও না। ভাইয়ের সঙ্গে আমার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনো ঝামেলাই হয়নি। গত ২৩ তারিখ রাতে ময়মনসিংহ গেছি, ২৪ তারিখ রাতে হলে আসছি। এরপর গতকাল রাতে আবারও ময়মনসিংহ আসছি। আমি এখন কমলাপুরে নামছি, একটু পর হলে আসব। আমি আজকের মারধরে যুক্ত ছিলাম না।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকই আজকে মারধরের ঘটনায় তাকে জড়িত থাকতে দেখেছে জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে তারা হয়ত ভুল দেখছে। আমি তো হলের বাইরে।’

এ বিষয়ে আরেক অভিযুক্ত সাব্বির রহমান বলেন, ‘ওই ভাই (অনিক) গত ২৪ তারিখ আমার হলের এক ছোট ভাই মাসফিকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করে তার আচরণ ভালো না বলে টিএসসির উদ্যান গেইটে থাপ্পড় দিছে।

হামলায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মীদের তিনজন সাব্বির, পিটার ও নাইমুর (বাম থেকে ডানে)। ছবি: নিউজবাংলা

‘এরপর গতকাল রাতে মাসফি সেই ভাইকে আমাদের হল গেইটে পোস্টার লাগাতে দেখে বুঝতে পারছে, ভাই আমাদের হলেরই। এরপর আজকে সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে মারামারি, তর্কাতর্কি করছে। এরাই মূলত ঝামেলাটা করছে। এরপর আমরা গিয়েছি। তখন আর কিছু হয়নি।’

তার নেতৃত্বেই এই হামলার অভিযোগ জানালে অভিযুক্ত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখন তারা যদি বলে আমি সেখানে ছিলাম বলে তাহলে তো আর কিছু করার নেই। তবে আমি যতদূর জানি আমি ছিলাম না।’

মাসফির বক্তব্য জানালে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘কিন্তু আমি জানি মাসফির সঙ্গেই এই ঘটনা ঘটেছে।’

আরেক অভিযুক্ত নাইমুর রাশেদ বলেন, ‘প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে হয়ত এই ভাই মারছে। তাই তাদের বন্ধুবান্ধবরা মারামারি করতে গেছে। তারপর আমরা গিয়ে সেই ঝামেলা সমাধান করার জন্য বড় ভাইদের ফোন দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’

অন্য অভিযুক্ত সফিউল্লাহ সুমন পিটারকে ফোন দিলে তিনি নিজেকে পিটার নয়, রাকিব দাবি করে রং নম্বর বলে ফোন কেটে দেন।

ভুক্তভোগীকে বাঁচাতে গিয়ে মারধরের শিকার আরেক শিক্ষার্থী

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, মারধরের সময় আখলাকুজ্জামান অনিককে বাঁচাতে গেলে দুই দফায় মারধরের শিকার হয়েছেন তার রুমমেট রাজিব আহমেদও।

এ বিষয়ে রাজিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে অনিক ভাই আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলছে, এরা (অভিযুক্তরা) মনে হয় কিছু নিয়ে কথা বলতে চায়। আসো তো। আমি ঘুম থেকে উঠে দরজার দিকে গেলে বাইরে থাকা একজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, আপনার আসার দরকার নেই। এটা বলেই তারা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে।

‘আমি ঝামেলা হবে বুঝতে পেরে দরজা জোরে টেনে খুলে ফেলি। এরপর দেখি সাত- আটজন আমার দিকে তেড়ে এসে আমাকে অনবরত পাঁচ-ছয় মিনিট কিল ঘুষি মারছে। এরপর আমি পাশে ২০০৯ নং রুমে আশ্রয় নিলে ২৫ মিনিট পর সেখানেও ১৫-২০ জন এসে রুমে যা পারছে, থালা-বাসন থেকে শুরু করে চায়ের কাপ, রাইস কুকার সবগুলো দিয়েই আমাকে মারছে। এরপর আমি মেডিক্যালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি।’

এসব বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি সজিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক কেউই হলে ছিলাম না। পরে এসে শুনেছি দ্বিতীয় বর্ষের মাসফি নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভুক্তভোগী অনিকের মাঝে পূর্বের একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল হয়ত। সেটার জের ধরে আজকের এই ঘটনা।’

মাশফির বক্তব্য সজিবুর রহমানকে জানালে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি শুনেছি তার সঙ্গেই ঘটনাটা ঘটেছে।’

সজিব বলেন, ‘এটা আসলেই দুঃখজনক ঘটনা। হলের অভ্যন্তরে যেহেতু এই ঘটনা এটির দায়বার এড়ানোর কোনো সুযোগ হল প্রশাসনের নেই। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যারা দোষী তাদের ব্যাপারে হল প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিবে আমাদের জায়গা থেকে পূর্ণ সমর্থন করব।’

এদিকে এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছিরকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। ইতোমধ্যে দায়িত্বরত শিক্ষককে সেখানে পাঠিয়েছি। তিনি কথা বলেছেন। আমরা রোববার সকালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর