নাতনি মুনিরা মাসুম বিল্লাহর ই-পাসপোর্ট করতে বেশ কয়েক দিন ধরে আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে ঘুরছেন মাহমুদুল হক। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলেও এই বৃদ্ধের কাজটি হচ্ছে না।
পাসপোর্ট অফিসে মাহমুদুল হকের মতো ভুক্তভোগীর ভিড় এক সপ্তাহের বেশি সময়জুড়ে। সেবা পেতে প্রায় প্রতিদিনই তারা এখানে আসছেন এবং সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন, তবে ই-পাসপোর্ট করতে গিয়ে গ্রাহকের ভোগান্তির অভিযোগ মানতে নারাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী মাহমুদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল সার্টিফিকেটে সন্তানের নাম দিয়েছিলাম মাসুম বিল্লাহ, তবে জন্ম নিবন্ধন করেছিলাম মাসুম বিল্লাহ মানিক নামে। সার্টিফিকেটের নাম দিয়েই ছেলে পাসপোর্ট বানিয়েছে। এখন নাতনির জন্য যে পাসপোর্টের আবেদন করেছি, সেখানে ছেলের নাম দিয়েছি মাসুম বিল্লাহ মানিক। বলা হলো যে, এই ভুল এফিডেভিট করতে হবে।
‘পাসপোর্ট অফিসের কথামতো ভুল এফিডেভিট করে জমা দেয়ার পর সংশ্লিষ্টরা বললেন নোটারি সত্যায়িত করে আনতে। সেটা করে জমা দিয়েছি। ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ পাসপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। এবার বলছে যে, নামের বানান ভুল হয়েছে। এখন ফাইল নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। আর আমি কেবল ঘুরছি।’
ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম এর আগে ১৫ ও ১৬ মার্চ ঘোষণা দিয়ে বন্ধ ছিল। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অধীনে ডিজ্যাস্টার রিকভারি সাইটে (ডিআরএস) ওএটি এবং ফেইল ওভার টেস্ট সম্পাদনের কারণে ওই দুই দিন দেশের সব বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।
১৭ মার্চ চালু হওয়ার কথা থাকলেও ওই দিন থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যায়নি। ২০ মার্চ ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হলেও দুই ঘণ্টা পর সার্ভার ডাউন হয়ে যায়।
ই-পাসপোর্ট অ্যান্ড অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন অবশ্য গ্রাহকের ভোগান্তি মানতে নারাজ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টেস্ট করতে গিয়ে টেকনিক্যাল ভুলের কারণে ২০ থেকে ২২ মার্চ সেবা বিঘ্নিত হয়েছে, তবে সেই সংকট কেটে গেছে।’
ই-পাসপোর্ট পেতে বিলম্বের অভিযোগ সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো গ্রাহক সঠিক তথ্য দিলে এবং তথ্যের কোনো পরিবর্তন না করলে তার পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে না, তবে তথ্যের গরমিল থাকলে সেগুলো আমরা আবার ঠিক করে নিয়ে আসতে বলি। সেসব ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বলেন, ‘ই-পাসপোর্টের জন্য প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়ছে। এর বিপরীতে দিনে ২০ হাজারের বেশি পাসপোর্ট বিতরণ করা হচ্ছে, তবে সম্প্রতি সার্ভারের জটিলতার কারণে আবেদনের সংখ্যা একটু বেড়েছে।’
ই-পাসপোর্ট হলো বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে অ্যামবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ রয়েছে। পাসপোর্টধারীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চিপে সংরক্ষণ করা হয়৷
বাংলাদেশে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে।
বিশ্বে এ পর্যন্ত ১২০টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ১১৯তম দেশ।