বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চবির সব মুক্তিযোদ্ধার নাম নেই স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভে

  •    
  • ২৬ মার্চ, ২০২২ ০৯:০৬

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘এটায় (স্মৃতিস্তম্ভে) অনেক আগে থেকে ৭ জনের নাম যুক্ত করা আছে। বাকিদের নামও যুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিল থেকে ভেরিফিকেশন হয়ে আসতে হবে। ৭ জনের নাম ভেরিফাই করা আছে, জাদুঘর থেকে আমরা লিস্টটা নিয়েছি, সবার কনফার্মেশন আসলে আমরা সেটা যুক্ত করে দেব।’

মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে চবির জিরো পয়েন্টে নির্মিত হয় স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভ। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছবি ও নাম-পদবি এ স্তম্ভে স্থান পেয়েছে। তবে এতে নেই আরও ৯ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম।

স্বাধীনতার পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠা লাভ করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে বীরত্বপূর্ণ অবদান। মাতৃভূমি স্বাধীন করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারীসহ মোট ১৬ জন।

তবে স্মরণস্তম্ভসহ বিভিন্ন সড়ক ও হল মিলিয়ে সাত মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকলেও এখনও বিস্মৃত রয়ে আছেন বাকি ৯ মুক্তিযোদ্ধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে থাকা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আছে ১৫ মুক্তিযোদ্ধার নাম। এর বাইরে আরও এক মুক্তিযোদ্ধার নাম গণমাধ্যমে উঠে আসে।

‘স্মরণ’ স্মৃতিস্তম্ভে যে সাত শহীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের চেইনম্যান বীর প্রতীক মোহাম্মদ হোসেন, চাকসুর জিএস আবদুর রব, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ফরহাদ উদ-দৌলা, অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র নাজিম উদ্দিন খান, উপসহকারী প্রকৌশলী প্রভাস কুমার বড়ুয়া এবং আলাওল হলের প্রহরী ছৈয়দ আহমদ।

স্মৃতিস্তম্ভে নেই দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক অবনী মোহন দত্ত, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল মনসুর, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসেন, মোস্তফা কামাল ও মনিরুল ইসলাম খোকা, বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থী খন্দকার এহসানুল হক আনসারি, অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আবদুল মান্নান, ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আশুতোষ চক্রবর্তী, গণিত বিভাগের ছাত্র ভুবনের নাম।

শুধু তাই নয়, স্মরণস্তম্ভে স্থান পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কারও নামে হল, কারও নামে সড়ক কিংবা নিজ বাড়িতে জাদুঘর করা হলেও বাকি ৯ মুক্তিযোদ্ধা চবি ক্যাম্পাসে বিস্মৃত।

স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয় ২০০৯ সালে। সে সময় উপাচার্য ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ। এটির নকশাকার ও নির্মাতা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ সাইফুল কবীর। স্মৃতিস্তম্ভটির ভূমি থেকে স্মরণের মূল বেদি পর্যন্ত চারটি ধাপ। প্রতিটি ধাপ বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

এর প্রথম ধাপ বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, দ্বিতীয় ধাপ উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, তৃতীয় ধাপ সত্তরের নির্বাচন ও চতুর্থ ধাপে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। বেদির ওপরে রয়েছে দুটি স্তম্ভ। সামনের আয়তাকার স্তম্ভটির উচ্চতা ৯ ফুট, যা মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস সময়কে বোঝায়। পেছনে রয়েছে ১৬ ফুট লম্বা আরেকটি স্তম্ভ যা স্মরণ করায় বিজয় দিবসকে। আয়তাকার অংশটিতে সাত মুক্তিযোদ্ধার ছবি ও নাম সাজানো আছে।

বিষয়টি জানতে সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) ফরহাদ হোসেন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সে সময় (২০০৯ সালে) সাতজনের নাম পেয়েছিলাম। এটি তৈরির আগে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিলাম। তবে সাতজনের বেশি কাউকে পাইনি।

‘মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১৬ জন থাকতে পারে ঠিক, আরও বেশি থাকতে পারে, তবে আমরা সাতজনের বেশি পাইনি। জাদুঘর থেকেও এই তথ্য আমাদের দেয় নাই। আমরাও তখন তথ্য-উপাত্ত নেয়ার চেষ্টা করেছি, অনুসন্ধান চলিয়েছি’ বলেন তিনি।

তিনি জানান, বীর প্রতীক মোহাম্মদ হোসেনের নামে একটা জাদুঘর করা হয়েছে তাদের বাড়িতে। এর বাইরেও বাকিদের নামে সড়ক ও এক মুক্তিযোদ্ধার নামে আবাসিক হল আছে। মোহাম্মদ হোসেনের পরিবারকে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাননা দেয়া হয়েছিল।

কথা হয় স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাতা ও নকশাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ সাইফুল কবীরের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওই সময় সাতজনের বেশি খুঁজে বের করতে পারে নাই। পরে হয়তো আরও পাওয়া গেছে। অধ্যাপক আবু ইউসুফ বেঁচে থাকাকালীন শেষ সময়ও এ রকম একটা প্রসঙ্গ উঠেছিল। তিনি তখন বলেছিলেন, যদি এই রকম আরও কেউ থাকেন তাহলে প্রমাণাদি যাচাই সাপেক্ষে সেটাও যুক্ত করে দেয়া হবে।’

সাইফুল কবীর বলেন, ‘আবু ইউসুফ সাহেব মারা গেলেন। এরপর অন্যান্য উপাচার্য যারা আসলেন তারাও কখনও বলেনি এখানে আরও নাম স্থাপন করা হোক। নাম ও ছবি স্থাপন করতে কোনো অসুবিধা নেই। যারা আছেন তাদের নাম-ছবি অবশ্যই এখানে থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। এই নিয়ে কর্তৃপক্ষ আমাকে কখনো কিছু বলে নাই।’

এর বাইরে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন স্তম্ভটি নির্মাণ করি তখন এটিতে ব্ল্যাক গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করি, যেটা খুব এক্সপেন্সিভ। কিন্তু করোনার প্রথম দিকে (২০২০ সালে) আমি গিয়ে দেখি গ্রানাইট পাথর বাদ দিয়ে সেখানে চিপ (সস্তা) টাইলস লাগানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আমাকে সে সময়ের প্রধান প্রকৌশলী সদুত্তর দিতে পারেননি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘এটায় (স্মৃতিস্তম্ভে) অনেক আগে থেকে সাতজনের নাম যুক্ত করা আছে। বাকিদের নামও যুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিল থেকে ভেরিফিকেশন হয়ে আসতে হবে। সাতজনের নাম ভেরিফাই করা আছে, জাদুঘর থেকে আমরা লিস্টটা নিয়েছি, সবার কনফার্মেশন আসলে আমরা সেটা যুক্ত করে দেব।’

এ বিভাগের আরো খবর