বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডলারের একক আধিপত্য খর্বের মুখে

  •    
  • ২৫ মার্চ, ২০২২ ১৯:১৫

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া দেশগুলোর কাছে ডলারের পরিবর্তে রুবলে গ্যাস বিক্রি করবে মস্কো। জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ানির্ভর হওয়ায় পুতিনের এ ঘোষণা ইউরোর পাশাপাশি ডলারের জন্যও বড় ধাক্কা তৈরি করেছে।

সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার যুগ যুগ ধরে বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বাণিজ্যের স্বার্থে চীন, ভারত, বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশ বিভিন্ন সময়ে ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার মান কমিয়েছে (অবমূল্যায়ন); এতে আরও শক্তিশালী হয়েছে ডলার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডালে ডলারের বিপরীতে অনেক দেশের মুদ্রার মান আরেক দফা কমেছে। ভারতে প্রতি ডলারের জন্য এখন গুনতে হচ্ছে ৭৬ টাকা ৩৬ পয়সা। বাংলাদেশে লাগছে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। এর আগে আর কখনও ডলারের বিপরীতে এতটা সস্তা হয়নি ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা।

যুদ্ধের শুরুতে সবচেয়ে বড় দরপতন হয় রাশিয়ান মুদ্রা রুবলের। ইউক্রেনে হামলার জেরে পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে রুবলের মান কমতে কমতে গত ৭ মার্চ আমেরিকান ডলারের বিপরীতে মান ১৩২ এ নেমে আসে। অর্থাৎ ১ ডলারের জন্য খরচ করতে হয় ১৩২ রুবল।

তবে বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি ঘোষণা সবকিছু ওলোটপালট করে দিয়েছে। পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া দেশগুলোর কাছে ডলারের পরিবর্তে রুবলে গ্যাস বিক্রি করবে মস্কো। জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ানির্ভর হওয়ায় পুতিনের এ ঘোষণা ইউরোর পাশাপাশি ডলারের জন্যও বড় ধাক্কা তৈরি করেছে।

রুশ প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পরেই বুধবার ডলারের তুলনায় রুবলের মান তিন সপ্তাহের মধ্যে বেড়ে সর্বোচ্চ হয়। ১ ডলারের বিপরীতে দাম ১০০-এর নিচে নেমে ৯৫-এ স্থির হয়েছে রুবল। ইউরোর বিপরীতেও দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতি ইউরো বৃহস্পতিবার বিনিময় হয় ১১০.৫ রুবলে।

রুবলকে শক্তিশালী করতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে রাশিয়া। বিপক্ষে অবস্থান নেয়া দেশের বাইরে অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছে মস্কো। এরই মধ্যে ভারত রাশিয়া থেকে রুবলে তেল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য রুবল-টাকার মাধ্যমে করার বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ম্যানটিটস্কি।

এমন উদ্যোগ কার্যকর হলে বিশ্ব মুদ্রাবাজারে আমেরিকান ডলারের ‘একক আধিপত্য’ খর্ব হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষক আহসান এইচ মনসুর ও মোস্তাফিজুর রহমান।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে সত্যিই একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই যুদ্ধ বিশ্বকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। চীন, ভারতসহ রাশিয়ার মোটামুটি মিত্র দেশগুলো তাদের আমদানি-রপ্তানি ডলারের পরিবর্তে নিজ নিজ দেশের মুদ্রায় শুরু করে দিলে কিন্তু ডলারের সেই একক আধিপত্য আর থাকবে না।

‘আর রাশিয়ার গ্যাসের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ইউরোপের দেশগুলোকে যদি ডলারের পরিবর্তে রুবলে গ্যাস কিনতে হয় তাহলেও ডলার দুর্বল হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার আর্থিক লেনদেনের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে সুইফট সিস্টেমের বাইরে গিয়ে চীনের মুদ্রা বা টাকা ও রুবলে লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা ও মস্কো যেটা ভাবছে, সেটা সম্ভব। তবে এতে কিছুটা সময় লাগবে। দুই দেশের এ বিষয়ে অনেক কাজ করতে হবে।’

দেশের আরেক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে রুবলে তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। সেটা সম্ভব হলে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজও রুবল-টাকায় হওয়া সম্ভব।

‘তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, সরকার টু সরকার বাণিজ্য হলে সেটা রুবল-টাকাতে হওয়ায় খুব একটা সমস্যা নেই। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। কেননা, বেসরকারি উদ্যোক্তারা টাকা দিয়ে যেমন সহজেই ডলার কিনতে পারেন; রুবল তো সেভাবে পাবেন না।’

অন্যদিকে, ডলারের বদলে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মাধ্যমে তেলের দাম পরিশোধের বিষয়ে দেশটির সঙ্গে আলোচনা চলছে সৌদি আরবের। রিয়াদ-বেইজিংয়ের আলোচনা নিয়ে গত ১৬ মার্চ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন উদ্যোগে বৈশ্বিক পেট্রোলিয়াম বাজারে ডলারের আধিপত্য কমতে পারে।

সৌদি আরবের রপ্তানি করা তেলের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি কিনছে চীন। এই বিক্রি ইউয়ানে হলে চীনের মুদ্রার মান বৃদ্ধি পাবে।

রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি

চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাশিয়াতে ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অংক গত বছরের একই সময়েরর চেয়ে ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের এই আট মাসে ৪০ কোটি ১২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। রাশিয়াতে প্রধানত তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।

এ বিভাগের আরো খবর