বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৭ বছর পর ফিরে স্ত্রীকে জানালেন আরেক বিয়ের কথা

  •    
  • ২৫ মার্চ, ২০২২ ১৯:১৫

মজনু বলেন, ‘আমি লাইলির অনুমতি ছাড়াই ঢাকায় বিয়ে করি। সেখানে দুই ছেলেসন্তান আছে আমার। সব মিলিয়ে আমি অনুতপ্ত। আমার কন্যাসন্তানরা আমাকে ক্ষমা করলে আমি মরে শান্তি পাব।’

ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা শামসনগর গ্রামের লাইলি বেগম ও রফিকুল ইসলাম মজনুর বিয়ে হয় ২০০১ সালে। এক বছর পর তাদের কোলজুড়ে আসে মেয়ে রিয়া মনি। ২০০৫ সালে লাইলির গর্ভে যখন দ্বিতীয় সন্তান, তখন তার কোনো এক কথায় অভিমান করে ঘর ছাড়েন মজনু।

১৭ বছর পর মান ভেঙে ঘরে ফিরেছেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানদের অসহায় অবস্থায় ফেলে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশও করেছেন। তবে বাড়ি ফিরে জানালেন, এর মধ্যে আরেক বিয়ে করেছেন, সে সংসারে আছে তার দুই সন্তানও।

এত বছর ধরে একা দুই সন্তানকে বড় করতে কষ্ট হলেও স্বামী ফিরে আসায় খুশি লাইলি। সব ভুলে তিনি আবারও মজনুর সঙ্গে সংসার করতে রাজি।

ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফেরেন মজনু।

লাইলি বলেন, ‘বিয়ের এক বছর পর আমার বড় মেয়ে রিয়া মনির জন্ম হয়। ওর বয়স এখন ১৮। ছোট মেয়ে রিনি ববি যখন আমার পেটে, তখনই চলে যায় আমার স্বামী। সে সময় মোবাইল ফোন ছিল না আমার। অনেক খুঁজেও তাকে পাইনি। ১৭ বছর ধরে কাঁদছি আমি। অন্য ঘর করিনি। হোটেলে মসলা বাটার কাজ করে অন্যের ভিটায় আশ্রিতা হিসেবে জীবন যাপন করছি। সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি।

‘আমার বিশ্বাস ছিল একদিন সে সব মান ভেঙে ফিরে আসবে। আজ আমি পৃথিবীর সেরা সুখী মানুষ। আমি আজ নিশ্চিন্ত। সন্তানরা তাদের বাবার মুখ দেখেছে।’

মজনু বলেন, ‘লাইলির একটা কথা আমাকে কষ্ট দেয়। তাই ১৭ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। সন্তানদের কথা মনে পড়ত। কিছুদিন আগে এখানকার এক লোকের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তার থেকে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে স্ত্রী-সন্তানদের দেখতে আসি।

‘আমি লাইলির অনুমতি ছাড়াই ঢাকায় বিয়ে করি। সেখানে দুই ছেলেসন্তান আছে আমার। সব মিলিয়ে আমি অনুতপ্ত। আমার কন্যাসন্তানরা আমাকে ক্ষমা করলে আমি মরে শান্তি পাব।’

এই দম্পতির ছোট মেয়ে রিনি ববি বলেন, ‘আমার বাবা কে- আমি জানতাম না। মায়ের কাছে কখনও শুনতাম বাবা হারিয়ে গেছে, কখনও বলত মারা গেছে। এভাবে কেটেছে ১৭ বছর। বাবার আদর-স্নেহ-ভালোবাসা পাইনি।

‘আমি আমার বাবাকে আর হারাতে চাই না। সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুল করলেও আমরা তার পরিচয়ে বড় হতে চাই। মায়ের রাতের চাপাকান্না আর দেখতে চাই না আমরা।’

এত বছর পর লাইলি-মজনু ফের মিলিত হওয়ার খবরে তাদের দেখতে আসেন আশপাশের লোকজন।

ওই গ্রামের হাসিনা বানু বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লালন করেছে লাইলি। সন্তানদের মানুষ করেছে। ১৭ বছর পর তার স্বামী ফিরেছে, ভালো লাগছে তাই দেখতে আসছি।’

লাইলির প্রতিবেশী জুলেখা আক্তার বলেন, ‘মেয়েটা খুব অভাগী। ভিটেবাড়ি নেই। হোটেলে কাজ করে সমাজে টিকে আছে। স্বামী থেকেও ১৭ বছর ধরে সে একা। বাকি জীবন লাইলিকে যেন আর কষ্ট ছুঁতে না পারে এই প্রত্যাশা করি।’

স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা উপমা পল্লি উন্নয়নের নির্বাহী পরিচালক ফারজানা আক্তার পাখি বলেন, ‘লাইলির অপেক্ষা প্রমাণ করে একটা নারী ভেতর থেকে কতটা শক্তিশালী হতে পারে। সমাজের নানা কটু দৃষ্টিভঙ্গি ও কটু কথার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে লাইলিকে।

‘আমার চোখে লাইলি এক সংগ্রামী নারী। সে তার অনাগত আগামীর প্রতিটা মুহূর্তে স্বামীর স্বীকৃতি ও ভালোবাসা পাবে এই প্রত্যাশা করি। লাইলির পাশে থাকব আমরা।’

এ বিভাগের আরো খবর