মোংলা বন্দরের সংলগ্ন পশুর নদের চ্যানেলে নাব্যতা বজায় রাখতে নিয়মিত অধিক মাত্রায় খনন (ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং) প্রয়োজন। এ খনন করা বালু-মাটি রাখার জন্যে পশুর নদের পশ্চিম পাড়ে খুলনার দাকোপ উপজেলার বাণিশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর কৃষি জমি হুকুমদখলের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে ওই তিন ফসলি জমি সরকার হুকুমদখলে নিলে সামান্য পরিমাণে ক্ষতিপূরণ মিলবে বলে অভিযোগ মালিকদের। তাই কৃষকরা তাদের জীবিকা হারানোর শঙ্কায় জমি দিতে রাজি হচ্ছেন না।
জমি বাঁচানোর জন্য নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন তারা। অন্যদিকে খুলনা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমি হুকুমদখলের কাজও এগিয়ে চলছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন্দরের নাব্যতা বাড়াতে পশুর নদ খননের বালু-মাটি ফেলে রাখার জন্যে দুই বছরের জন্যে তাদের জমি নেয়া হবে। এর জন্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে একর প্রতি মাত্র দুই লাখ টাকা দেয়া হবে। কৃষিজমিতে বালু-মাটি ফেললে কোনো ফসল হবে না।
কৃষিজমি বাঁচানোর দাবিতে স্থানীয়দের মানববন্ধন। ছবি: নিউজবাংলা
তারা বলছেন, এতে তাদের জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এই জমিতে বর্তমানে তিনটি ফসল ফলে। জমি থেকে কৃষকদের আয়ও অনেক বেশি। এছাড়া অধিকাংশ কৃষকের আয়ের একমাত্র উৎসও ওই জমি। জমি হারিয়ে ফেললে ভিটেমাটি ছেড়ে উদ্বাস্তু হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
বাণীশান্তা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্য সঞ্জীব কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমরা এই জমি কোনোভাবে হুকুমদখল করতে দেব না। আমরা হুকুমদখলের জন্য দেয়া নোটিশ গ্রহণ করিনি। দ্বিতীয় দফায় আবারও নোটিশ আসবে বলে শোনা যাচ্ছে। আমরা সেই নোটিশও নেব না।’
তিনি বলেন, ‘বালু-মাটি ফেললে ওই জমিতে আর কখনও ফসল করা যাবে না। এছাড়া মাটির ঢিবি হলে নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। ফলে এই এলাকায় আর মানুষ বসবাস করতে পারবে না। আমাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে।’
খুলনা জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে খনন প্রকল্পটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটি) অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের আওতায় পশুর নদ থেকে প্রায় ২১৬ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালু উত্তোলন করা হবে। মোংলা বন্দরের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় এই মাটি-বালু দাকোপ ও মোংলা উপজেলার বিভিন্ন খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ফেলা হবে। মাটি ও বালু ফেলার জন্য মোংলার ৭০০ একর এবং বাণীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর জমির প্রয়োজন।
কৃষিজমি বাঁচাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। ছবি: নিউজবাংলা
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের নভেম্বরে খনন প্রকল্পের পরিচালক বাণীশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে মাটি ফেলার জন্য জমি হুকুমদখলের অনাপত্তির বিষয়ে চিঠি দেয়।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওই জমিকে কৃষিজমি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন পাঠান।
চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা প্রশাসকের পক্ষে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হুকুমদখলের নোটিশ দিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মালিকদের জমির দখল হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।
তবে সেই নোটিশ গ্রহণ করেননি কৃষকরা। তারা এর প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভ করছেন।
সর্বশেষ ৮ মার্চ বাণীশান্তা-ভোজনখালি সংযোগ সড়ক মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্থানীয়রা জমিতে বালু ফেলার এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে হুকুমদখলের বিরোধিতা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মারুফুল আলম বলেন, ‘ওটা কৃষিজমি, তিন ফসল হয় বলে জেনেছি। মোংলা বন্দরের জন্যে ওই জমিই হুকুমদখল করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই বছরের জন্য হুকুম দখল করব। ওখানে যে ফসল হয় তার দাম নির্ধারণের জন্য আমরা জেলা বাজার কর্মকর্তাকে বলেছি। তার মতামত পেলে আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানাব।’