দরিদ্রের বিনা মূল্যে সবজি দেয়া ব্যবসায়ী ইব্রাহিমের উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও দুই ব্যবসায়ী। চট্টগ্রামের দুই ব্যবসায়ী কাইসার আলী চৌধুরী এবং আবু হাসান নতুন করে আরও সবজি ডোনেট বক্স স্থাপন করেছেন বাজারে।
এই ডোনেট বক্সে সামর্থ্যবানরা সবজি কিনে দান করেন এবং যাদের সামর্থ্য নেই তারা বক্স থেকে বিনা মূল্যে সবজি নিয়ে যান।
বিষয়টি নিয়ে ইব্রাহিম খলিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতে তো আমি একা ছিলাম, লোকজনও কম আসত৷ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে দ্বিগুণ-তিন গুণ মানুষ আসছেন সবজি নিতে। আমার তো এত সামর্থ্য নেই। কাইছার ভাই ও হাসান ভাই এগিয়ে এসেছেন, তারা আমার উদ্যোগটি চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।’
তারা ছাড়াও কেউ কেউ গণমাধ্যমে নিউজ দেখে ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। এক ব্যক্তি ৫ হাজার টাকা দিতে শহরের বাইরে বোয়ালখালী থেকে গেলেও টাকা নেননি ইব্রাহিম।
‘আমি টাকাটা না নিয়ে ডোনেট বক্সে সবজি কিনে দিতে বলেছি। উনি ২ হাজার ৬০০ টাকার সবজি কিনে দিয়েছেন।’
দরিদ্র্যদের বিনা মূল্যে সবজি দিতে ডোনেট বক্স চালু করেন চট্টগ্রামের ইব্রাহিম। ছবি: নিউজবাংলা
এখন অনেক বেশি লোক যাচ্ছেন সবজি নিতে, তাই উদ্যোগটি চালিয়ে নিতে পারবেন কি না তা জানেন না। বলেন, ‘এখন তো মানুষ অনেক বেশি আসছেন, যারা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা তো আর প্রতিদিন সহযোগিতা করছেন না। দিনে এখন ১৫ জনের মতো লোক আসছেন। আমার সামর্থ্য তো এত বেশি নেই, তবু কাউকে ফিরিয়ে দিইনি।’
তার নেয়া উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি তো ছোট মানুষ, আমার ছোট উদ্যোগ। শুধু চেয়েছি কয়েকজন মানুষ হলেও দুবেলা দুমুঠো খাবার আরামে খেতে পারুক। দ্রব্যমূল্যের বাজার তো চড়া, অনেকের কষ্ট হচ্ছে।
‘এখন যেহেতু এটি ছড়িয়ে পড়ছে, এখন চট্টগ্রাম শহরে ১০-১২টি বাজারে এটি চালু হয়েছে। শুনে খুব খুশি লাগল, এটাই তো পাওয়া। এখন আরও বেশি মানুষের উপকার হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজারগুলোর একটি কর্ণফুলী মার্কেট। সেখানে মঙ্গলবার বসানো হয়েছে ১০ নম্বর সবজি ডোনেট বক্স। বাজারের সব ব্যবসায়ী সম্মিলিতভাবে তদারক করবেন। তবে দেখভালের দায়িত্বে আছেন সবজি ব্যবসায়ী মো. মামুন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা কাইসার ও আবু হাসান ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলে বসিয়েছেন। দরিদ্ররা এখান থেকে বিনা মূল্যে সবজি নিতে পারবেন। এটা তো অনেক ভালো হবে, অনেকের তো টাকা-পয়সা কম, এখন সবকিছুর দামও বেশি, কিনতে পারেন না। আর যাদের টাকা-পয়সা বেশি তারা এখানে দান করবেন। কেউ দান না করলেও আমরা সবজি ব্যবসায়ী যারা আছি এখানে এটা আমরা চালিয়ে নেব- ইনশা আল্লাহ।’
ইব্রাহিমের উদ্যোগ ডোনেট বক্সের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া দুই ব্যবসায়ীর একজন কাইসার আলী চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইব্রাহিম একজন সবজি ব্যবসায়ী, তার উদ্যোগটা দারুণ। সে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তার পুঁজি কম। তাই আমরা তার সঙ্বেগ কথা বলে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করতেছি।’
তিনি জানান, কারও একার পক্ষে এসব উদ্যোগ চালিয়ে নেয়া সহজ নয়, তাই সবার সহযোগিতা দরকার। তাই এখন পর্যন্ত তারা ১৫টি ডোনেট বক্স স্থাপন করেছেন।
কাইসার আলী বলেন, ‘কোথাও কোথাও একজন সবজি বিক্রেতা একাই তদারকির দায়িত্ব নিয়েছেন, আর কোথাও বাজারের সব ব্যবসায়ী মিলে তদারক করছেন। এটায় সামর্থ্যবানরা সবজি রাখবেন, দরিদ্ররা সেখান থেকে নেবেন। সামনে যেহেতু রমজান এটা আরও ফলপ্রসূ হবে। আমরা রোজার আগে সারা দেশে এ রকম ৫০টি সবজি ডোনেট বক্স বসাতে চাই।’
গত ১২ মার্চ ‘দরিদ্রদের বিনা মূল্যে সবজি দেন ইব্রাহিম’ শিরোনামে নিউজবাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সে সময় ইব্রাহিম নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘দোকান থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করলে ২০ শতাংশ লাভ হলেও ২ হাজার টাকা পাই। খরচ বাদ দিয়ে আমার হাতে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকার মতো থাকে। এই টাকা থেকেই প্রতিদিন কিছু যাদের প্রয়োজন তাদের ২০০-৩০০ টাকার সবজি বিনা মূল্যে দিই।
প্রতিদিনই তো বেচা শেষে কিছু সবজি নষ্ট হয়ে যায়। সেটার খরচ তো আমাকে কেউ দেয় না। তাই কিছু ভালো সবজি সামর্থ্যহীন মানুষকে দিয়ে দিলে ক্ষতি কী?’
প্রতিদিন ছয়-সাতজন মানুষ বিনা মূল্যে সবজির জন্য আসেন জানিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘তারা এসে কিছু বলেন না, দোকানের সামনে এসে আমাকে খুঁজলেই বুঝতে পারি। এ ছাড়া অনেকে আবার এসে বেশি দামের সবজির কথা বলে সবচেয়ে কম দামের সবজি কেনেন।
‘তখন কিছু সবজি তাদেরও দিয়ে দিই। তারা আমার জন্য দোয়া করেন, এটাই তো পাওয়া। আবার কিছু মানুষ লজ্জায় আমাকে বলেন না, কারও মাধ্যমে বলান।’