ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে সন্ত্রাস ও গণহত্যার অভিশাপ থেকে কখনও মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি শাহরিয়ার কবির।
জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে গণহত্যা জাদুঘর আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণহত্যার পাঁচ দশক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে সন্ত্রাস ও গণহত্যার অভিশাপ থেকে কখনও মুক্তি পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু এ কারণেই বাহাত্তরের সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যা হয়েছে ধর্মের নামে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণহত্যার যে রাজনীতি বা দর্শন তার মূলোৎপাটন করা।
সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত এই সভাপতি। প্রবন্ধের শুরুতেই একাত্তরের গণহত্যার বিবরণ তুলে ধরেন তিনি।
এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণহত্যাকারীদের বিচারের জন্য যে আন্দোলন ও ট্রাইব্যুনাল গড়ে উঠেছিল, সেগুলোর দিকে আলোকপাত করার পাশাপাশি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেন শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজন কূটনৈতিক উদ্যোগ ও একাডেমিক আলোচনা। মুক্তিযুদ্ধের পর পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ব্যাহত করেছে দেশ ও বিদেশের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী।
‘পরবর্তী সময়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসে গণহত্যা জাদুঘর ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মকে জানতে হবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি জাতিকে যে চরম মূল্য দিতে হয়েছে, তা অন্য কোনো জাতিকে কখনও দিতে হয়নি।’
গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি ড. মুনতাসীর মামুন সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি গণহত্যা জাদুঘরের কার্যক্রম, বিশেষ করে গণহত্যা জাদুঘর দেশব্যাপী যে গণহত্যা-নির্যাতন, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছে তা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, আগের রেফারেন্স বইয়ে গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতন কেন্দ্রের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৯০৫, আর তাদের জরিপে ৩৪টি জেলায় সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৮৬। তাহলে ৬৪ জেলার সে সংখ্যা কত দাঁড়াতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
অনুষ্ঠানে গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি তারিক সুজাত গণহত্যাবিষয়ক কবিতা পাঠ করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি আসাদ মান্নান।