বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিপু হত্যা দলীয় কোন্দলে, এজাহারে স্ত্রী

  •    
  • ২৫ মার্চ, ২০২২ ১৬:৩৪

মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘আমার স্বামী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। ১০ বছর ধরে বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলীয় কোন্দল ছিল। চার-পাঁচ দিন আগে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী আমার স্বামীকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেয়।’

চার-পাঁচ দিন আগে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতি মোবাইল ফোনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার হুমকি দেয়। এক দশক ধরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলীয় কোন্দলের জেরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি শুক্রবার মামলার এজাহারে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।

রাজধানীতে বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারীর গুলিতে জাহিদুল ইসলাম টিপু নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী শাহজাহানপুর থানায় শুক্রবার সকালে একটি হত্যা মামলা করেছেন।

শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. জাফর নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি একটি হত্যা মামলা করেছেন।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘আমার স্বামী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। তার মতিঝিল কাঁচাবাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট আছে।

‘আমার স্বামী রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করতেন। ১০ বছর ধরে বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলীয় কোন্দল ছিল। চার-পাঁচ দিন আগে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী আমার স্বামীকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেয়।’

প্রতিদিনের মতো গতকাল (বৃহস্পতিবার) গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না মাইক্রোবাস নিয়ে হোটেলের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য রওনা হন।

মতিঝিল এজিবি কলোনিতে গ্রান্ড সুলতান নামে রেস্টুরেন্টে কাজ শেষে বাসার উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাত আনুমানিক সোয়া ১০টার দিকে মানামা ভবনস্থ বাটার দোকানের সামনে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি গুলি করে এবং গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার স্বামীর গলার ডান পাশে, বুকের বাম পাশে, বুকের বাম পাশের বগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যে নাভির নিচে, বাম কাঁধের ওপরে, পিঠের বাম পাশের মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বাম পাশের কোমর বরাবর, পিঠের ডান পাশের কোমরের ওপরসহ একাধিক স্থানে মারাত্মক জখম হয়।’

বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শাহজাহানপুরে অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারীর গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ তার গাড়িচালক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ১১টি গুলির খোসা উদ্ধার করে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।

নিহতদের একজন জাহিদুল ইসলাম টিপু মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। অন্যজন কলেজছাত্রী সুমাইয়া আফরিন প্রীতি। ২৪ বছর বয়সের এই কলেজছাত্রী রিকশায় করে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন। গুলিতে আহত প্রাইভেট কারের চালকের নাম মুন্না।

নিহত টিপুর স্বজন মেরাজউদ্দিন মেরাজ বলেন, ‘আমার ভাইসহ চারজন একটি গাড়িতে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় পৌঁছামাত্র দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় গাড়ির ভেতরে থাকা চালকসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হন। একজন রিকশারোহীও গুলিবিদ্ধ হন।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০টা ২২ মিনিটে টিপু একটি সাদা রঙের নোয়াহ মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা মসজিদের সামনে থেকে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের দিকে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি সাউথইস্ট ব্যাংকের সামনে জ্যামে আটকা পড়ে।

ওদিকে বিপরীত দিকের রাস্তায় দুই যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। টিপুর গাড়িটি জ্যামে আটকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেলমেটধারী দুই যুবকের একজন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে টিপুর গাড়ির দিকে ছুটে আসেন। এরপর গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এতে গাড়ির ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হন টিপু। এ সময় চালকের হাতে গুলি লাগলে তিনি গাড়ির গতি বাড়িয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

ওদিকে শুরুর দিকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতি। ঘটনার পরপরই আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, গাড়িতে টিপুসহ মোট চারজন ছিলেন। গাড়িচালক মুন্নার পাশের সিটে বসা ছিলেন টিপু। আর পেছনের সিটে ছিলেন মিরাজ ও কালাম নামে দুই ব্যক্তি। তবে তারা দুজন অক্ষত আছেন।

স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে ঢামেকে আনলে চিকিৎসক রাত ১১টার দিকে টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) আব্দুল খান বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহজাহানপুর থেকে তিনজনকে ঢামেকে আনার পর আওয়ামী লীগ নেতা এবং এক নারীকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই নেতার গাড়িচালক মুন্নাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনার পর তার চিকিৎসা চলছে।’

স্বজনরা জানান, নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে খুন হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী। আলোচিত এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন তৎকালীন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু।

মিল্কী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন টিপু। জামিনে বের হয়ে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। স্ত্রী ডলি কাউন্সিলর হলে তার মাধ্যমেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। একসময়ের দাপুটে নেতা টিপুকে হত্যার জন্য পরিকল্পিতভাবেই হামলা করা হয় গাড়িতে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে অন্তত ১০-১২ রাউন্ড গুলি করা হয়।

কারা এবং কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি স্বজনরা। পুরোনো রাজনৈতিক বিরোধেই এ ঘটনা বলে মনে করছেন তারা।

পুরান ঢাকার একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আফরিন প্রীতি দুর্ঘটনাবশত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে মনে করছে পুলিশ। টিপুর হত্যা নিশ্চিত করতে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হলে তাতেই রিকশাযাত্রী প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন।

এ বিভাগের আরো খবর