জোয়ার-ভাটায় নদনদীর পানির স্রোত নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষিকাজের সুবিধার জন্য বানানো স্লুইস গেট এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদারীপুরে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় মাদারীপুরে নির্মিত ৩৪টি স্লুইস গেটের বেশির ভাগই এখন জরাজীর্ণ। এসব স্লুইস গেট কোনো কাজে আসছে না সাধারণ মানুষের। তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসন সরেজমিন পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, নতুন প্রকল্প পেলেই মেরামত করবেন এগুলো।
সদর উপজেলারের মস্তফাপুরে স্লুইস গেট তৈরি করা হয় ব্রিটিশ আমলে। কিন্তু সেখানে পলি পড়ে মূল নদী থেকে ভিন্ন পথে নৌপথ সৃষ্টি হয়েছে। তিন মুখের কোনোটিতেই ডালা নেই। প্রতিটি ডালার মুখ ভাঙা, কাটা এবং গাছগাছালিতে ভরা। দেখলে বোঝা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে স্লুইস গেটটি।
কৃষিকাজে বছরজুড়ে পানি সরবরাহ করার জন্যই স্লুইস গেটটি তৈরি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে আছে গেটটি।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ব্রিটিশ আমলে জেলার সদর মস্তফাপুর, সমাদ্দার ও রাজৈর উপজেলার চৌকদার, আমগ্রাম ও রাজৈর গণউন্নয়ন এলাকায় বড় পাঁচটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। এরপরে ১৯৮৪ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কালকিনির উত্তর-দক্ষিণ দুই দিকে ছোট-বড় মিলিয়ে আরও ২৯টি স্লুইস গেট নির্মাণ হয়।
এসব গেটের বড় পাঁচটিই পুরোপুরি অকেজো আর কালকিনির ২৯টির মধ্যে কার্যক্রম বন্ধ ২০টি, কিছুটা মেরামতযোগ্য রয়েছে ৯টি।
স্থানীয়দের দাবি, পাউবোর তদারকির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্লুইস গেটগুলো। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
মস্তফাপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে স্লুইস গেট ঝোপঝাড়ে পরিত্যক্ত জায়গা হিসেবে পড়ে রয়েছে। গেটের অন্য পাশ দিয়ে নৌপথ তৈরি হয়েছে। পাউবোর কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এই গেট এখন গলার কাঁটার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকায় নির্মিত স্লুইস গেটটি অকেজো পড়ে আছে। ছবি: নিউজবাংলা
এলেক্স শাওন নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই দেখছি অকেজো হয়ে পড়ে আছে গেট। কৃষিকাজে উপকার তো দূরের কথা, বরং এই গেটের কারণে অন্য দিকের নদী ভাঙছে। এখন যদি এই গেট উঠিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে মূল নদীতে পানি প্রবাহিত হবে। কিন্ত অজ্ঞাত কারণে কেউ এদিকে নজর দিচ্ছে না।’
মাদারীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩টি নদনদী রয়েছে। এসব নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। স্লুইসগেট সচল থাকলে সারা বছরই নদীর পানি ব্যবহার করা যাবে বলে প্রান্তিক চাষিরা মনে করেন।
রাজৈর উপজেলার আমাগ্রাম এলাকার কৃষক মনোয়ার বয়াতী বলেন, ‘এ গেটে কোনো কাজ হয় না। বর্ষার সময়ে যেমন পানি আসে, তেমনি খরার সময়েও পানি আসে। পানি যে গেট দিয়ে ধরে রাখবে, তার কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব গেট থাকলেও কিছু হয় না, আবার না থাকলেও কিছু হয় না। বরং গেট থাকায় জঙ্গলে পরিণত হয়ে আছে।’
নতুন প্রকল্প পেলে মেরামতযোগ্য গেটগুলো সচল করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাদারীপুরে ছোট-বড় ৩৪টি পানি রোধক গেট রয়েছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমলে তৈরি গেটগুলো সম্পূর্ণ অকেজো।
‘আর যেগুলো পরে নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মাত্র ৯টি মেরামতযোগ্য রয়েছে। বিষয়টি এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন মহল সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছে।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘পাউবোর সঙ্গে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষি ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে স্লুইস গেট যাতে সচল রাখা যায়, সে জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া একান্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কারও গাফলতি থাকলে সেটাও খুঁজে বের করা হবে। আর যেসব জায়গায় পানি প্রবাহ নেই, সেগুলো প্রয়োজনে ভেঙে ফেলা উচিত। তাই সেগুলোও দেখা হবে।’