বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাসপাতাল-মহাসড়ক বন্ধ রেখে ‘অভিমানী’ বদলি ঠেকানোর চেষ্টা

  •    
  • ২৪ মার্চ, ২০২২ ২২:১৪

‘অভিমান’ করে নেয়া বদলি প্রত্যাহারের জন্য মহাসড়ক বন্ধ রাখা হলো কেন জানতে চাইলে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ডাক্তার রাসেল সাহেবকে যারা ভালোবাসে তারা সড়কে শুয়ে পড়েছিল। সড়ক বন্ধের বিষয়টি আসলে পূর্বঘোষিত ছিল না।’

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) বদলি ঠেকাতে ৩ ঘণ্টা ধরে খুলনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। বন্ধ রাখা হয় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবাও; তবে জরুরি বিভাগ ও টিকা কার্যক্রম চলমান ছিল।

জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে এই কর্মসূচি পালন করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারাও।

পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে তারা অবরোধ ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন।

আরএমও আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল নিজের বদলির জন্য গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পিরোজপুরে কাউখালীতে বদলি করা হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বদলি ঠেকাতে কর্মসূচির পরিকল্পনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কমর্চারীসহ স্থানীয়দের একটি পক্ষ।

বিনা ঘোষণায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকায় মহসড়কের দুই প্রান্তে শত শত বাস ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে; দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন রোগীরাও।

গালুয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর থেকে আসা রোগী নাছিমা বেগমের স্বামী ফোরকান মৃধা বলেন, ‘৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ডাক্তার দেখাইছি। কাল ও পরশু হাসপাতাল বন্ধ থাকবে, তা না হলে বাড়ি ফিরে যাইতাম।’

সদর ইউনিয়নের বাইপাস এলাকার শেমালা বেগম সকালে বেশ কিছুক্ষণ হাসপাতালে অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আইয়া হুনি আইজ হাসপাতাল বন্ধ। ডাক্তারগো কী যেন অনুষ্ঠান হইব। মুই গরমে বইয়া থাকতে আর পারি নাই। এহন চইললা যাইতেছি।’

স্ত্রী ও শিশুসন্তান নিয়ে বাগেরহাট থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে মহাসড়কে আটকা পড়েন শাহিন আহম্মেদ।

তিনি বলেন, ‘আড়াই বছরের বাচ্চা নিয়া বাগেরহাট থেকে বরিশাল যাচ্ছিলাম। গরমে বাসের মধ্যে বসে থাকতে না পেরে রাস্তায় হাঁটতেছি। আন্দোলন হবে হোক, কিন্তু আমরা যাত্রীরা কী দোষ করেছি?’

অবরোধে ক্ষুব্ধ তকদির পরিবহনের বাসের চালক আব্দুল মন্নান বলেন, ‘আমার টাইমের গাড়ি, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারলে পরবর্তী সিরিয়াল পাব না। এই খেসারত কে দেবে?’

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, অভিমান করে বদলি নিয়েছেন আরএমও রাসেল। ‘সেবক কখনই অভিমানী হয় না... আপনার স্বেচ্ছায় বদলির আদেশ প্রত্যাহার চাই’- এই স্লোগান লেখা ব্যানার নিয়ে তারা মানববন্ধন করেন।

এই আন্দোলনে অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহীন মৃধা, উপজেলা বিআরডিবি চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সুমন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান ও ইউপি সদস্য সৈয়দ সুমন।

তারা জানান, এলাকায় আরএমও রাসেলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। এ কারণেই তাকে রাখতে চান সবাই।

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ডাক্তার রাসেল গরিবের চিকিৎসক, তিনি রাজাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে দুর্নীতিমুক্ত রেখেছেন। তাই তারে এই হাসপাতালে রাখতে চাই।’

তবে এই দাবি পূরণের জন্য মহাসড়ক ও হাসপাতাল বন্ধ রাখা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার রাসেল সাহেবকে যারা ভালোবাসে তারা সড়কে শুয়ে পড়েছিল। সড়ক বন্ধের বিষয়টি আসলে পূর্বঘোষিত ছিল না।’

উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন মৃধা বলেন, ‘আমরা মানববন্ধনের আয়োজন করি, কিন্তু স্থানীয় সাধারণ মানুষ যখন কর্মসূচিতে অংশ নেয়, তখন এমনিতেই একটু সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।’

কী অভিমান ছিল আরএমও রাসেলের?

আরএমও আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল

নিউজবাংলাকে এই চিকিৎসক বলেন, ‘সম্প্রতি আজম খান নামে একজন স্যাকমো চিকিৎসক ভুল ইনজেকশন পুশ করে এক রোগীর পা অচল করে দিয়েছেন। সেই রোগী আমার হাসপাতালে এলে আমি বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানাই। সেই ঘটনায় তদন্ত চলমান। ওই স্যাকমো রাজাপুরে সোহাগ ক্লিনিক নামে একটি প্রতিষ্ঠানে বসে রোগী দেখেন।

‘ঘটনার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলে ওই ক্লিনিক মালিক আমার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচারে লিপ্ত হন। আমার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগে নানা মিথ্যা অভিযোগ দেন। তাই আমি স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেছি।’

এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোক্তার হোসেন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে জনস্বার্থে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাস্তা থেকে অবস্থানকারীদের সরিয়ে দিই।’

তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসক জোহর আলীও খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি আরএমওর বদলির আদেশ প্রত্যাহারের আশ্বাস দেন।

এ বিভাগের আরো খবর