বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উচ্চবিত্তের আমানত বাড়ছে, কমছে ‘ছোট’দের

  •    
  • ২৪ মার্চ, ২০২২ ২০:৪৪

করোনা শুরুর বছর ২০২০ সালে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২১ সাল শেষে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪ শতাংশ কমে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু একই সময়ে বড় আমানতকারী বেড়েছে। এক বছরে কোটি টাকার হিসাবে যুক্ত হয়েছে আরও আট হাজার হিসাব।

করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে না পেরে ২৫-৩০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করে বেসরকারি একটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। সেখানে কর্মরত ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। চাকরি হারিয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দীর্ঘদিন ধরনা দিয়েও লাভ হয়নি। সংকটকালীন দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে তখন চোখে-মুখে অন্ধকার অবস্থা। জমানো সামান্য অর্থই ছিল ভরসা। পরে ছোট একটি চাকরি পেলেও এখনও কষ্ট কমেনি।

সঞ্চয় ও বিনিয়োগ তো পরের কথা; জমানো পুঁজি ভেঙে সংসারের ব্যয় মেটানোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। মধ্যবিত্ত, নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকট এখন সবচেয়ে বেশি। মূল্যস্ফীতির এই বেসামাল অবস্থায় জীবন ধারণ করাই এখন দুষ্কর। অনেকেই ব্যাংক থেকে তুলে নিচ্ছেন জমানো অর্থ।

ব্যাংকগুলোয় কমেছে আমানতে প্রবৃদ্ধি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বিক্রিতে চাঙা থাকা সঞ্চয়পত্রেও এখন মানুষ বিনিয়োগ করছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনা শুরুর বছর ২০২০ সালে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২১ সাল শেষে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪ শতাংশ কমে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশে নেমেছে।

জানুয়ারিতে সেটা আরও কমেছে।

কিন্তু একই সময়ে বড় আমানতকারী বেড়েছে। এক বছরে কোটি টাকার হিসাবে যুক্ত হয়েছে আরও আট হাজার হিসাব।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগও কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১২ হাজার ১৭৬ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৭০২ কোটি টাকা।

অর্থনীতিতে যখন কোনো সংকট বিদ্যমান, আয়ের পথ সংকুচিত হয়, তখন একশ্রেণির মানুষের হাতে অর্থবিত্ত বেড়ে যাওয়া সুখের লক্ষণ নয়– এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম চড়া। পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেও খরচ বেড়েছে। এতে অনেক মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার প্রভাব কমায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ হচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংক থেকে আমানত কমছে। করোনায় অধিকাংশের আয় কমেছে। কিন্তু নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠীর আয় আরও বেড়েছে।’

আমানত কত কমেছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানত ছিল ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেটা কমে ১৪ লাখ ১ হাজার ৭৫৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৭৫ হাজার ৮৮৭ কোটি বা দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এর মধ্যে ডিমান্ড ডিপোজিট (চলতি আমানত) কমেছে ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোয় চলতি আমানত ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৮ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে সেটা কমে হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

আর সঞ্চয়ী বা মেয়াদি (টাইম ডিপোজিট) আমানত কমেছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোয় সঞ্চয়ী আমানত ছিল ১২ লাখ ৪১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে সেটা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।

২০২০ সালে ব্যাংকগুলোয় আমানত ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ৷

কিন্তু একই সময়ে ব্যাংকগুলোয় বড় অঙ্কের আমানত বেড়েছে ৮ হাজারের বেশি। ২০২১ সাল শেষে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব এক লাখ ছাড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে কোটিপতি আমানতকারীর তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ৮ হাজার ৮৬টি হিসাব। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টিতে।

এর মধ্যে ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার বেশি হিসাবে জমা ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবগুলোয় জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র বিক্রিতেও ভাটা

ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। কিন্তু চলতি বছর এই খাতেও ভাটা দেখা যাচ্ছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এই বিক্রির পরমাণ ছিল দ্বিগুণেরও বেশি, ৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১২ হাজার ১৭৬ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম।

২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৭০২ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর