জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মার্কেটিং বিভাগের ১২তম আবর্তনের একদল শিক্ষার্থী রাজধানীতে শব্দদূষণ বিরোধী ক্যাম্পেইন করেছেন।
রাজধানীর শান্তিনগর ও মৌচাক মোড়ে বৃহস্পতিবার এ ক্যাম্পেইন করেন তারা। শিক্ষার্থীরা তাদের কোর্সের অংশ হিসেবে জনসচেতনতামূলক এ ক্যাম্পেইন করেন।
সেলিং অ্যান্ড সেলস ম্যানেজমেন্ট কোর্সের আওতায় মার্কেটিং বিভাগের অক্টাগন গ্রুপের নয় সদস্য এ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন। তারা হলেন, তাহসিন ফাহাদ, তানভির মাহমুদ তমাল, অনিক ইসলাম মুন্না, মোস্তফা ইয়াকিন নিয়ন, উমর ফারুক খান, তাসনিম হক সিনিন, পুজা মজুমদার, শাহরিয়ার তাসনুভ ফাহিম, সৈয়দ মো. মোফাচ্ছিরুল হক।
ক্যাম্পেইন চলাকালীন শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দিয়ে গাড়িচালকদের সচেতন করেন। সেই সঙ্গে অযথা হর্ন না বাজাতে চালকদের প্রতিজ্ঞা করান তারা।
শান্তিনগরের পুলিশ সার্জেন্ট আজহারুল ইসলাম এ ক্যাম্পেইন নিয়ে বলেন, ‘এ ধরনের ক্যাম্পেইন করার জন্য মার্কেটিং বিভাগের ফ্যাকাল্টিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রচুর শব্দের কারণে এখানে সাধারণ মানুষের অনেক সমস্যা চোখে পড়ে। এ মোড়ে দাঁড়িয়ে আমরা সেটা প্রায়ই দেখি।
‘এখন হর্ন বাজানো একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মানুষের কাছে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। যদি এমন ক্যাম্পেইন আরও করা যায় তাহলে আমরা সর্বাধিক সাহায্য করব।’
ক্যাম্পেইন নিয়ে সাধারণ পথযাত্রী বলেন, ‘এ ক্যাম্পেইন যারা করছেন উনাদের এমন ক্যাম্পেইন আরও করা উচিত। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আমার একটা সাজেশন তারা যেন বিআরটিএতে গিয়ে ওখানকার কর্তব্যরত সবার সঙ্গে কথা বলে আর এই সচেতনতা ছাড়া যেন লাইসেন্স দেয়া না হয়। এই ম্যাসেজ যেন পাঠিয়ে দেয়।’
ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া অক্টাগন গ্রুপের সদস্য তাহসিন ফাহাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের পুরাতন মহামারি এই শব্দদূষণ। এটি প্রতিকারের একমাত্র ভ্যাকসিন হলো সাধারণ জনগণের সচেতনতা। আমাদের এ ক্যাম্পেইনে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি গাড়িচালক, রিকশাচালকসহ যাত্রীদের মধ্যেও সচেতনতা বৃদ্ধির।’
এর আগে বুধবার ক্রমবর্ধমান শব্দদূষণ রোধে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সংগঠন নবিস মার্কেটার্সের উদ্যোগে শব্দদূষণ বিরোধী ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়।
কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় শব্দদূষণ বিরোধী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে সংগঠনটির সদস্যবৃন্দ। মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিদ্যুৎ কুমার বালোর নেতৃত্বে সংগঠনটি রাজধানীর পল্টন মোড়, কাকরাইল মোড় এবং শান্তিনগর মোড়ে এ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে।
ক্যাম্পেইন শেষে বিদ্যুৎ কুমার বলেন, ‘অপ্রয়োজনে গাড়ির হর্ন আমাদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। যা একটা সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা যদি এক ডেসিবল শব্দ কমাতে সাহায্য করে সেটাই আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।’
রমনা জোনের সার্জেন্ট সুশীল চন্দ্র বলেন, ‘আপনাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। শব্দদূষণের মতো জাতীয় সমস্যা সমাধানে চাই দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ও পরিকল্পনা।’
ট্রাফিক ও যানচলাচল পরিদর্শক তারিকুল আলম সুমন বলেন, ‘ঢাকা শহরে কোনো হর্নের দরকার নেই। এখানে এমনিতেই গাড়ির গতি কম। আমি নিজে তিন বছর ধরে কোনো হর্ন বাজাই না, তাতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি এখন পর্যন্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত শব্দ এবং হর্নের ফলে আমরা ট্রাফিক পুলিশ যারা রাস্তায় কাজ করছি তাদের ক্ষতি হচ্ছে। সারাক্ষণ অতিরিক্ত শব্দের ফলে জোরে কথা বলে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ফলে বাসায় যখন যাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা যায় উচ্চস্বরে কথা বলি। তখন তারা মনে করে আমি রেগে আছি বা বিরক্ত হয়ে কথা বলতেছি।’
কাকরাইলের ট্রাফিক সার্জেন্ট শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমিও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। আপনারা শব্দদূষণ প্রতিরোধের মতো একটা উদ্যোগ নিয়েছেন দেখে খুবই ভালো লাগছে। আমরা সারাক্ষণ রাস্তায় ডিউটি করি। অতিরিক্ত হর্ণের শব্দে মেজাজ সবসময় খিটখিটে থাকে। রাতে ভালো ঘুম হয় না। এর বাইরেও নানানরকম শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।’
সংগঠনটির সদস্যদের মধ্যে এনামুল হক, রিয়াল মল্লিক ও সোহেল রানা বলেন, কাজটা চ্যালেঞ্জিং তবে ভালো কোনো কিছু পেতে হলে অবশ্যই করতে হয়। আমরা আশা করছি তৃণমূল পর্যায়ে শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে পারব।