ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ামুখী জাহাজে পণ্য বুকিং চলতি মাসের শুরু থেকে বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অফ-ডকে রাশিয়াগামী ১৬৯ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য আটকে পড়ে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাকপণ্য। রাশিয়ামুখী জাহাজে পণ্য বুকিং বন্ধ থাকলেও বিদেশি ক্রেতারা এবার বিকল্প বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য রাশিয়া নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
ইতোমধ্যে ৬৮ একক কনটেইনার তৈরি পোশাকপণ্য শ্রীলংকার কলম্বো বন্দর হয়ে পোল্যান্ডে নেয়া হচ্ছে। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে এসব কনটেইনার রাশিয়া যাবে।
এ ছাড়া আরও ১৮ একক কনটেইনারভর্তি পণ্য তুরস্কের মারসিন বন্দর হয়ে রাশিয়া নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এই ৮৬ একক কনটেইনার এতদিন চট্টগ্রামের বেসরকারি অফ-ডক কনটেইনার ডিপো পোর্ট লিংকস লজিস্টিকসে পড়ে ছিল। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক দৌস মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে শুরু থেকেই সব স্টেকহোল্ডার চিন্তায় ছিল। একদিকে জাহাজ ভাড়া ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়া এবং অন্যদিকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে চট্টগ্রামের ৯টি অফ-ডকে রাশিয়ামুখী রপ্তানি পণ্যের ১৬৯ একক কনটেইনার আটকে পড়ে। তবে বিদেশে ক্রেতাদের উদ্যোগের কারণেই এই অচলাবস্থা কেটে গেছে। অবশেষে বিকল্প বন্দর হয়ে রপ্তানি পণ্যগুলো রাশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।’
৬৮ একক কনটেইনার বর্তমানে পোল্যান্ডের পথে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সড়কপথে সেগুলো রাশিয়ায় পৌঁছাবে। এর আগে মার্চের প্রথম সপ্তাহে এসব কনটেইনার শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে নেয়া হয়। বর্তমানে আরও ১৮ একক কনটেইনারভর্তি রপ্তানি পণ্যও নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন ডিপোয় এখনও আরও ১০১ একক কনটেইনার পড়ে আছে। বিকল্প বন্দর ব্যবহার করে এগুলোও অচিরেই রাশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খাইরুল আলম সুজন বলেন, ‘রাশিয়ায় যে কার্গোগুলো যায় একই ক্রেতার অন্য গন্তব্যগুলোতেও কার্গো আছে। তাই আমাদের জন্য এটা বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। আমাদের কার্গো এখান থেকে সহজেই নিয়ে যাওয়া যাবে।’
দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ায় পণ্য রপ্তানি করে আসছে চট্টগ্রামের সনেট টেক্সটাইল। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক লায়ন গাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ মাসের শুরুর দিকে ফিফার ছয় লাখ অফিশিয়াল টি-শার্ট রাশিয়া পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। এ জন্য কনটেইনারের বুকিং দিলেও যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য আটকা পড়ে।
‘যদিও বিকল্প বন্দর হয়ে বর্তমানে এগুলো পোল্যান্ড হয়ে রাশিয়ার পথে রয়েছে। যুদ্ধের কারণে চট্টগ্রামের অফ-ডকগুলোয় আটকে থাকা অনেক রপ্তানিকারকের পণ্য রাশিয়ায় পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। মাঝে কিছুদিন অচল অবস্থা থাকলেও ক্রেতাদের সদিচ্ছার কারণে অচলাবস্থার নিরসন হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরাও দুশ্চিন্তা মুক্ত হলেন।’
বিজিএমইএর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত আট মাসে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৪৮১ দশমিক ২৩ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকপণ্য। এর মধ্যে কেবল গত দুই মাসেই রপ্তানি হয়েছে ১৪০ দশমিক শূন্য ৩ মিলিয়ন ডলারের পোশাক।