আমানত-ঋণে সুদহার নির্ধারণ করে দেয়ায় কোনো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেন, ‘২০২১ সাল শেষে সব ব্যাংকই মুনাফা করেছে। সুদের হার নির্ধারণ করে দেয়া না হলে করোনার দুই বছর পর কোনো উদ্যোক্তা খুঁজে পাওয়া যেত না।’
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোনালী ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তির সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, দেশের প্রথম অর্থসচিব মতিউল ইসলাম, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে অবদান রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ব্যাংকটি। তবে সামনের দিনে টিকে থাকা তাই কিছু চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন বক্তারা। সেবার মান বাড়ানোসহ খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন নতুন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস নিয়ে আসার পরামর্শ দেন তারা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তফসিলি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়ার ফলে কেউ ইচ্ছেমতো সুদ নিতে পারে না। ফলে কোনো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আগে ১৮/২০ শতাংশ সুদ নেয়া হতো। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। সুদহার নির্ধারণ করে দেয়ায় ব্যাংকগুলো ভালো আছে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহকবান্ধব সেবায় এখনো পিছিয়ে রয়েছে মন্তব্য করে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘গ্রাহকদের সেবা দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আরও কাজ করতে হবে। গ্রাহকের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে হবে।
‘ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রক্রিয়ায় সময় লাগে বেশি। হলমার্কের পর সোনালী ব্যাংকের ঋণভীতি আছে। এটা অবশ্যই কাটাতে হবে। শুধু বড় বড় প্রকল্পে ঋণ দিলে হবে না। ক্ষুদ্রঋণ আরও বাড়াতে হবে। সঠিকভাবে ঋণ দিলে কোনো ভীতি নেই।’
সোনালী ব্যাংক নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘গ্রাহক আকৃষ্ট করার জন্য সোনালী ব্যাংকের প্রচারের দরকার হয় না। করোনাকালেও এই ব্যাংক প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব শাখা খোলা রেখে সেবা দিয়েছে। কোভিডে ১২৮ ব্যাংকার মারা গেছেন, এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৩৩ জন। ব্যাংকটির লোকসানি শাখা কমে এখন ১৬টিতে দাঁড়িয়েছে।’ এটা দ্রুত শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় সোনালীসহ সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে।’
অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাংক ফেল (দেউলিয়া) করছে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো ব্যাংক এখনো ফেল করেনি। কারণ, যখনই কোনো ব্যাংকে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সরকার সেই ব্যাংকের পাশে দাঁড়িয়েছে।
‘সোনালী ব্যাংক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিনা কমিশনে প্রায় এক লাখ কোটি টাকায় এলসি খোলার সুযোগ দিয়েছে। ফলে সরকারের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংক রাষ্ট্রের গুরুত্ববহ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।’
সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নন-পারফরমিং লোন আরও কমাতে হবে। সামনের দিনগুলোতে ভালো অবস্থান ধরে রাখতে হলে অটোমেশনে যেতে হবে। অনলাইন ব্যাংকিং হলেও অটোমেশনে তেমনটা নেই, এটা করতে হবে। এটা না করলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে ব্যাংক। নতুন নতুন সার্ভিস ইনোভেশনের জন্য গবেষণা বিভাগ করতে হবে।
‘ব্যাংকিং প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে সব কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আরও প্রশিক্ষণ দিতে হবে, তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।’
সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রচার কম বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বলেন, ‘মানুষের ব্যাংকভীতি দূর করে তাদের ব্যাংকমুখী করেছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক। স্বাধীনতার অনেক পর ১৯৮২ সালে বেসরকারি ব্যাংক কাজ শুরু করে। এর আগে সরকারি ব্যাংক নিরলসভাবে সেবা দিয়ে গেছে। মানসম্মত ও ভালো মানের সেবা দিচ্ছে বলে ব্যাংকগুলোর দৃঢ় অবস্থান তৈরি হয়েছে।’