স্বাধীনতা পদক প্রদানে সরকার ‘আত্মীয়করণ’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
ফখরুল বলেন, ‘দেখেন এত ব্যর্থ, এত অযোগ্য তারা (সরকার) যে স্বাধীনতার পদক যেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন সেই স্বাধীনতার পদক নিয়ে তারা দুর্নীতি করেছে। যেখানে আমির হামজা নামে একজনকে তারা পদক দিয়েছে যার সম্পর্কে... পরে বাতিল করে দিয়ে তার আবার নতুন করে তারা তদন্ত করছে।
‘শুধু তার-ই কেন? আরও যাদের দিয়েছেন তাদেরটা তদন্ত করুন, তারা কারা? এদের বেশির ভাগই হয় তারা এই মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজন অথবা তারা প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন।’
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গত ১৫ মার্চ এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে সরকার। এতে সাহিত্যে অবদান রাখায় মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পান আমির হামজা।
আমির হামজার নাম ঘোষণার পর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। প্রথম দিকে বাংলা সাহিত্যে তার অবদান নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। একপর্যায়ে হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে স্বাধীনতার পুরস্কারজয়ী এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিতে নয়জন ব্যক্তি এবং দুই প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালের স্বাধীনতার পুরস্কার পেয়েছে।
বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে চিকিৎসা ও সেবা কমিটির উদ্যোগে ‘স্বনির্ভর দেশ গঠনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সাতজন চিকিৎসক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের অবদানের জন্য ক্রেস্ট দেয়া হয়।
তারা হলেন অধ্যাপক ফরিদুল হুদা, অধ্যাপক মোবিন খান, অধ্যাপক শামসুল ইসলাম, সাহাদাত হোসেন, অধ্যাপক মোমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক আবদুল হক। এ ছাড়া বিএনপির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আবদুস সালামকেও সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়।
প্রয়াত ফরিদুল হুদার পক্ষে তার ছেলে নাজমুল হুদা বিপ্লব এবং অধ্যাপক মোবিন খানের পক্ষে সাইফুল ইসলাম লেলিন ক্রেস্ট নেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চতুর্দিকে তারা (সরকার) লুটপাট, দুর্নীতি এমন একটা জায়গায় নিয়ে চলে গেছে যে এখন এ দেশকে রক্ষা করতে এদের সরানো ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। আজকে এরা গণতন্ত্রের সর্বনাশ করেছে। লাখ লাখ মানুষকে আজ এরা ঘরছাড়া করেছে।
‘৩৫ লাখ আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করেছে, ছয় শর বেশি মানুষকে তারা গুম করে দিয়েছে, সহস্র মানুষকে তারা হত্যা করেছে, এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
ফখরুল বলেন, ‘সব পেশাজীবীর কাছে আমরা আহ্বান জানাব, আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে। সব রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা দুর্বার গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে- এই সরকার স্বাধীনতাবিরোধী সরকার, জনগণের বিরুদ্ধের সরকার।’
দেশের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে দারিদ্র্যের হার দুই পারসেন্ট বেড়ে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একদম গেছে। এটা বাস্তবতা। দ্রব্যমূল্য এমনভাবে বেড়েছে, ইনফ্লুয়েশন এমনভাবে বেড়েছে যে মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
‘অথচ ২৪ ঘণ্টা আমাদের ওয়াদুল কাদের সাহেব সারাক্ষণ বিএনপিকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেন এবং কথা বলতে থাকেন।’
চিকিৎসা ও সেবা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও সদস্য ডা. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক মহাসচিব অধ্যাপক আবদুস সালামসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।