দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক বাম জোটের ডাকা হরতালে ভাঙচুর ও ধ্বংসাত্মক কাজ হলে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
চট্টগ্রামের দামপাড়ায় পুলিশ লাইনসে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্বোধন শেষে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ভোজ্যতেল, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৮ মার্চ সারা দেশে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ওই দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল পালন হবে।
সে হরতালের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা করে, ভাঙচুর করে, কেউ যদি ধ্বংসাত্মক কিছু করে, তাহলে অবশ্যই নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ভূমিকা রাখবে।
‘আমরা মনে করি রাজনৈতিক দলগুলো সহনশীলতার পরিচয় দেবে। তারা কোনো ভাঙচুরে যাবে না, ধ্বংসাত্মক কাজ করবে না, জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে না, জনগণের জানমালের কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। করলে যেটা হয়, সেটাই হবে।’
জাদুঘরের উদ্বোধন নিয়ে কামাল বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আমাদের জন্য সুন্দর একটা জাদুঘর উপহার দিয়েছে। ১৯৩০ সালে মাস্টারদা চট্টগ্রামে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে রাজারবাগে যে আক্রমণটা হয়েছিল, সে আক্রমণটা কিন্তু চট্টগ্রামেও হয়েছিল। এখানে প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছিল। একজন এসপি, শামসুল হক সাহেব যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মত্যাগ করেছেন। তার সঙ্গে ৮১ জন পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন।
‘আজকের জাদুঘরটি তারই স্বাক্ষর হিসেবে আমাদের পুলিশ কমিশনার সাহেব এটি তৈরি করেছেন। তাকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তার এই উদ্যোগে নতুন প্রজন্ম নিশ্চয়ই উপকৃত হবে এবং নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে স্বাধীনতাযুদ্ধে চট্টগ্রাম মাথা নিচু করেনি। মাথা উঁচু করে থেকেছে। তারই স্বাক্ষর হলো এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘যে জন্য আজ হরতাল ডেকেছে, সারা বিশ্বে কিন্তু তেলের দাম বেড়েছে, শুধু বাংলাদেশে বাড়েনি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেই যুদ্ধের কারণে আমাদের যে পরিবহন ব্যয়, সেটা দ্বিগুণ-তিন গুণ বেড়ে গেছে। এই ব্যয়টা অসম্ভব বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘আমাদের দেশ তেল আমদানি করে, অনেক কিছুই আমদানিনির্ভর। এই আমদানির ক্ষেত্রে যে দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে, এর প্রভাব আমাদের বাজারে কিছুটা পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, ভ্যাট ও ট্যাক্স এগুলো কমিয়ে দিচ্ছেন, যাতে সহজলভ্য হয়। টিসিবির মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।’
দ্রব্যমূল্য নিম্নমুখী দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘তেলের দাম, পিঁয়াজের দাম সবকিছুই এখন নিম্নমুখী। আমাদের প্রচেষ্টার কোনো অভাব নেই। তার পরও যদি কেউ হরতাল ডাকে, আমাদের কিছু করার নেই।
‘আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা যেন কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ না করে, জানমালের ক্ষতি না করে।’
নির্বাচনের এক বছর আগে থেকে একটা অস্থিরতা তৈরি হয় দেশে, এবারও এমন আশঙ্কা আছে কি না তা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অনেকে অনেক ধরনের কৌশল অবলম্বন করে। নির্বাচনে যাতে না আসতে হয়, নির্বাচন যাতে ফেস না করতে হয়, জনগণের ভোট যাতে না পেয়েই অন্য কোনোভাবে ক্ষমতায় আসা যায় কি না, অনেক ধরনের কৌশল অনেকেই করে, কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভরসায় চলেন; জনগণের শক্তিকেই নিজের শক্তি মনে করেন।
‘জনগণের শক্তিতেই তিনি রাজনীতি করেন; জনগণের আস্থাতেই তিনি রাজনীতি করেন। কাজেই কোনো ধরনের অপচেষ্টা করবেন, তারা জনগণ দ্বারা ধিকৃত হবেন, জনগণ থেকে দূরে সরে যাবেন।’
উদ্বোধন শেষে জাদুঘরটি ঘুরে দেখেন মন্ত্রী। ওই সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরসহ প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।