ফরিদপুরের আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন পিছিয়েছে। সেই সঙ্গে তার জামিন আবেদন নাকচ করেছে আদালত।
একই সঙ্গে ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইমতিয়াজ হোসেন রুবেলের জামিনের আবেদন ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শুনানি শেষে আসামিদের জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন। আগামী ১৭ এপ্রিল মামলাটির অভিযোগ গঠনের তারিখ ঠিক করেছে আদালত।
অভিযোগ গঠন আজই হওয়ার কথা ছিল। তবে আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন।
গত ৮ মার্চ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন।
শুনানিতে আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি বলেন, ‘বাবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তিনি অন্য আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলেন, আর অন্য আসামিরা ফরিদপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করল, তখন ফরিদপুরের প্রশাসন কী করছিল? প্রশাসনের ছত্রছায়ায় যদি হয় তবে প্রশাসনের লোকেরা আসামি নয় কেন?
‘শুধু রাজনৈতিক কারণে তিনি আসামি হয়েছেন। বয়স ৬৫ বছর, তিনি একজন অসুস্থ মানুষ। জামিন পেলে তিনি পালিয়ে যাবেন না।’
দুই ভাইয়ের পক্ষে আইনজীবী বলেন, ‘রুবেল ও বরকতের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুস্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি তারা করেছেন। তার মধ্যে তারা ১৬শ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ করেছেন। কাজগুলো তারা আইন অনুযায়ী করেছেন। সেখানে কোনো প্রকার নিয়ম মানা হয়নি এমন কিছুই মামলার অভিযোগে স্পষ্ট নয়। তারপরও সেই টাকার হিসাব এর মধ্যে কীভাবে আসবে? বাকি টাকার অভিযোগও সুনির্দিষ্ট নয়।’
আসামিরা প্রায় দুই বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন জানিয়ে আইনজীবী বলেন, তাদেরকে যেকোনো শর্তে জামিন দিলে তারা আইন অনুযায়ী চলবেন। তারা বিচারের মুখোমুখি হবেন।
আইনজীবী বলেন, এই অভিযোগের তদন্তের এখতিয়ার সিআইডির ছিল না- এমন দাবিও করেন বাবরের আইনজীবী।
রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুল হাসান জামিনের বিরোধিতা করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয়।
এই মামলায় আরও সাতজন আসামি আছেন। তারা হলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম।
২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০২০ সালের ২৬ জুন বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ।
গত বছর ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।
আসামিদের মধ্যে দুই ভাই রুবেল ও বরকতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসা থেকে। এই দুই ভাই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
দুই ভাই অতীতে বিএনপির নেতাদের ঘনিষ্ঠ থাকলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মোশাররফ ও তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। এক পর্যায়ে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন। পুলিশের তদন্তে বলা হয়েছে, খন্দকার মোশাররফ এলজিআরডিমন্ত্রী থাকাকালে এই দুই ভাই সারা দেশের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন।
দুই ভাই গ্রেপ্তারের পর থেকে খন্দকার মোশাররফ এলাকায় যাচ্ছেন না বললেই চলে।