বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনাকালে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২৪ মার্চ, ২০২২ ১৩:০৯

করোনাকালেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করেছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। অনেকে মনে করে এটি একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার, আসলে তা না। পরিকল্পিতভাবে যদি কাজ করা যায়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে যদি প্রতিটি প্রকল্প প্রণয়ন করা যায় এবং বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে যেকোনো অর্জনই সম্ভব হলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা সেভাবেই কাজ করি।’

করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে যখন বিশ্ব অর্থনীতি ধুঁকছে, তখন অব্যাহত আছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা। এটিকে অনেকে অস্বাভাবিক বললেও তা মানতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও লক্ষ্য স্থির করে যদি প্রতিটি প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায়, তবে যেকোনো অর্জনই সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। আর তাই মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।

ঢাকার তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। সেটা শুধু আমাদের না, বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করেছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। অনেকে মনে করে, এটি একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার, আসলে তা নয়। 'পরিকল্পিতভাবে যদি কাজ করা যায়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে যদি প্রতিটি প্রকল্প প্রণয়ন করা যায় এবং বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে যেকোনো অর্জনই সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা সেভাবেই কাজ করি।’

মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি গড় আয়ু বেড়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা এতদূর অর্জন করেছি যে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছি। এটি যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই আমরা চাই।’

বাংলাদেশ যাতে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকে, সে লক্ষ্য নিয়েই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আমরা কারও কাছে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব না। আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়ে নিজেদের গড়ে তুলব। আমরা ঘোষণা করেছি, যেহেতু আমাদের জায়গা অল্প, লোকসংখ্যা বেশি, প্রত্যেকটা গ্রামের মানুষ যেন নাগরিক সুবিধা পায়। কাজেই গ্রামগুলো যেন শহরে উন্নীত হয়।’

ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, এরপর ভবিষ্যতে যারাই আসবে ক্ষমতায়, তারা এই দিকটি লক্ষ্য রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যার ফলে বাংলাদেশের মানুষ আর কখনও পরমুখাপেক্ষী থাকবে না। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে চলবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। সেটাই আমরা চাই এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

দেশের সব গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন খুব অল্প লোকই বাকি আছে। ইনশাআল্লাহ এমন দিন বাংলাদেশে আসবে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না, সেটা আমরা করতে সক্ষম হব।’

বিজয়ীদের প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী সবাইকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকে যারা আমাদের মাঝে নেই তাদেরও আমি স্মরণ করি শ্রদ্ধার সঙ্গে। তাদের পক্ষ থেকে যারা পুরস্কার গ্রহণ করেছেন আমি মনে করি, তাদের আদর্শ নিয়ে আপনারা চলবেন।’

আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পরোপকারী মানুষ খুঁজে বের করারও তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যারা মানুষের কল্যাণে অবদান রেখে যাচ্ছেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন, হয়তো তারা কখনও প্রচারে আসেন না, তারা দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকেন। কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে তাদের পুরস্কৃত করা উচিত।’

কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কারণে যে, তাদের দেখে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিখবে এবং অন্যরাও শিখবে। মানুষের সেবা করার মধ্য দিয়ে, মানুষের কল্যাণে কাজ করার মধ্যে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, হাজার ধন সম্পদ বানালেও সেটা হয় না।’

ঘুচে গেল বন্দিদশা

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর এই প্রথম নিজ কার্যালয়ে সশরীরে কোনো অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন সরকারপ্রধান। তাই মন খুলে কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বহুদিন পরে মুক্তি পেলাম তো! আসলে করোনাভাইরাসের সময় তো একেবারে বন্দিখানায় ছিলাম। আজকে আমার একটা ইচ্ছা ছিল যে এখানে এসে নিজের হাতে…স্বাধীনতা পুরস্কার এটা তো একবার দিতে পারিনি। বারবার তো এভাবে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারি না।’

বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পারাটাও সম্মানের বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এটা আমার জন্য অনেক সম্মানের, স্বাধীনতা পুরস্কারটা হাতে তুলে দিতে পারছি। বহুদিন পর অফিসে আসার সুযোগ পেলাম। এত দিন ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে চালাচ্ছিলাম। সে জন্য বোধহয় একটু বেশি কথা বলে ফেললাম। আপনারা কিছু মনে করবেন না।’

‘আলোর পথে যাত্রা অব্যাহত থাক, বাংলাদেশের মানুষ সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত সোনার বাংলা পাক’- এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।

স্বাধীনতা প্রসঙ্গ

বাংলাদেশে স্বাধীনতায় মিত্রশক্তি হিসেবে যারা অবদান রেখেছেন তাদের স্মরণ করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেয়া, তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা, সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য দেশ আমাদের সহযোগিতা করেছে। আবার অনেকে বিরোধিতা করেছে।

‘যারা আমাদের সঙ্গে সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন, আত্মোৎসর্গ করেছেন, আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই। সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাই তদানীন্তন ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতীয় জনগণ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে। তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দিয়ে, সহযোগিতা দিয়ে, প্রেরণা দিয়েছে আমাদের।’

স্বাধীনতা অর্জনের পর পর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিজের দেশে ফিরিয়ে নেয়াকে ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র তিন মাসের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তার ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত নিয়ে যান নিজের দেশে। এটি সমসাময়িক ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা নেতা, সঙ্গে সঙ্গে আমি এটাও বলব, ইন্দিরা গান্ধীও ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা নেতা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে শুধু স্বীকৃতি দেননি, পুনর্গঠনের কাজেও অনেক সহযোগিতা তিনি করে গেছেন।’

এ সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্বের নানা দিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং হত্যা-পরবর্তী রাজনীতি, দেশের উন্নয়নবিমুখ হয়ে ওঠার বিষয়টিও উঠে আসে শেখ হাসিনার বক্তব্যে।

এ বিভাগের আরো খবর