ফরিদপুরে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের দিকে পেঁয়াজের দানা রোপণ শুরু হয়। মার্চ ও এপ্রিলে দানা থেকে ফুল হয়ে তা কালো বীজে পরিণত হয়। এ কারণে পেঁয়াজের বীজকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছে ‘কালোসোনা।’
এই কালোসোনা চাষে হাসি ফুটেছে জেলার কৃষকদের মুখে। কয়েক বছর ধরে ভালো দাম পাওয়ায় এবার আশাটাও তাই বড়।
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সাড়ে এক হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করা হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে এ বীজের চাষ।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হযরত আলী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৫০ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হবে আশা করা যায়, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকার মতো।’
তিনি জানান, বিএডিসির সংগৃহীত মোট পেঁয়াজ বীজের ৭০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকেই হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে দেখা যায়, কড়া রোদ উপেক্ষা করে পেঁয়াজের ক্ষেতে কালোসোনা পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। তাদের চোখে-মুখে দেখা যায় আশার আলো।
এ সময় পেঁয়াজের বীজ চাষি ইনতাজ মোল্লা বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদ থাকার পরও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় বীজের ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করি, বিঘা প্রতি তিন থেকে পাঁচ মণ বীজের উৎপাদন হবে। গত বছরের বাজার মূল্য প্রতি মণ এক লাখ টাকার মতো ছিল। আর খরচ প্রতি বিঘায় প্রায় এক লাখ টাকা। সেই হিসেবে বিঘা প্রতি এবার ভালোই আয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের বীজের বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এটি আমাদের কাছে সোনার মত। আমাদের এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করে। কিন্তু বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সব চাষিদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে না।’
অভিযোগ করে তিনি জানান, ব্যাংকগুলোও শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়, বর্গাচাষিদের দেয় না। তাই চাষিদের বাধ্য হয়ে এনজিও থেকে বেশি সুদে লোন নিয়ে পেঁয়াজের বীজ চাষ করতে হয়।
অম্বিকাপুর গ্রামের ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘এই বছর আড়াই বিঘা জমিতে বীজের চাষ করেছি। আশা করছি, দশ মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে।’
গোবিন্দুপুর গ্রামের চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাগো আবহাওয়া বীজ উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। আগামীতে আরও জমিতে কালোসোনা চাষ করব।’
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবকরা তাদের কর্মস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভের সহজ উপায় হলো বীজ চাষ। ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিদের আর্থিক স্বচ্ছলতাও ফিরে এসেছে এ কালোসোনায়।’