করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ শুরুর পর দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। এক মাস পর আবারও শুরু হয় সশরীরে ক্লাস।
ক্লাসে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের দুই ডোজ করোনা প্রতিরোধী টিকা নেয়ার কথা জানায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), কিন্তু স্কুলে সশরীরে ক্লাস শুরুর এক মাস পরও দ্বিতীয় ডোজ পায়নি প্রায় ২৪ লাখ শিক্ষার্থী।
মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বুধবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ২৭৭ জন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (২১ মার্চ আপডেট করা) এরই মধ্যে করোনা প্রতিরোধী টিকার দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১০ শিক্ষার্থী। সেই হিসাবে এখনও দ্বিতীয় ডোজ পায়নি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৭ শিক্ষার্থী, যা মোট শিক্ষার্থীর ১৭ শতাংশ।
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ফাইল ছবি
৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনা প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হিসাব বলছে, এখনও প্রথম ডোজ নেয়নি ২ লাখ ৬২ হাজার ২৬৬ শিক্ষার্থী।’
এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধী টিকা দেয়া চলমান প্রক্রিয়া। আশা করি, শিগগিরই শতভাগ শিক্ষার্থীকে এর আওতায় আনা হবে।’
কেন এখনও ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ জন্য কিছুটা দেরি হচ্ছে।’
মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন বিভাগ থেকে জানা যায়, করোনা প্রতিরোধী টিকার দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে বরিশাল বিভাগের ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর চট্টগ্রাম বিভাগের ৮৯ শতাংশ, কুমিল্লা বিভাগের ৮৭ শতাংশ, ঢাকা বিভাগের ৮৩ শতাংশ, খুলনা বিভাগের ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগের ৯২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগের ৮৯ শতাংশ, রংপুর বিভাগের ৭০ শতাংশ ও সিলেট বিভাগের ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পেয়েছে দ্বিতীয় ডোজ টিকা।
গত বছরের ১ নভেম্বর পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনা প্রতিরোধী টিকা দেয়া শুরু হয়। রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এর আগে গত বছরের ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়। তাদের কোনো সমস্যা না হওয়ায় পরে স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকা।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করা হয় গত ২১ জানুয়ারি। এ দফায় শিক্ষাঙ্গনে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকে এক মাস। ২২ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গনগুলো আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে।
২ মার্চ শুরু হয় প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস। টানা দুই বছর বন্ধের পর গত ১৫ মার্চ প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দুই দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। প্রথম দফায় প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে শিক্ষাঙ্গনের দুয়ার।