নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে নির্মাণাধীন মসজিদকে গির্জা বলে গুজব ছড়িয়ে মসজিদে হামলা, হত্যা, সহিংসতার ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক মামলা হলেও নেই অগ্রগতি। এতে ভুক্তভোগীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
২০১৬ সালের ১৪ মার্চ উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের পোরকরা গ্রামে নির্মাণাধীন মসজিদ ভেঙে বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলায় সোলেমান খোকন, ইব্রাহীম রুবেল নামে হিযবুত তাওহীদের দুই কর্মীকে গলা কেটে হত্যার পর মরদেহে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া মুজিবুল হক নামে আরও একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান।
হিযবুত তাওহীদের নোয়াখালী জেলা শাখার আমির নিজাম উদ্দিন ও তার স্বজনদের আটটি বসতঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে গ্রামবাসী। চাষীরহাট বাজারের দোকানপাট ও ব্যাংকে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।
পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পাঁচ শতাধিক রাবার বুলেট ও অসংখ্য কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। ঘটনার সময় হিযবুত তাওহীদের কর্মীদের ২০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় ৫০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছিলেন দেড় শতাধিক মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রামবাসীর কবল থেকে হিযবুত তাওহীদের অনুসারী নারী, শিশু, পুরুষসহ ১১৪ জনকে উদ্ধার করে।
মামলার বরাতে সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, এ ঘটনায় ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ পুলিশকে বাধা ও হত্যার চেষ্টাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি, বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা চারটি এবং নিহতের স্বজনরা তিনটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ছয়টি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশকে কর্তব্যকাজে বাধা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৬০৯ জন, হত্যা মামলায় ৬৫ জন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের চারটি মামলায় ৪৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এর মধ্যে ৮৫৬ জন জামিনে ও ২৪৫ জন আসামি পলাতক। এ ছাড়া কারাগারে পাঁচজন আসামি রয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের প্রভাবের কারণে অনেক আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা জামিনে এসে তাদের হুমকি দিচ্ছে এবং আবারও এ ধরনের সহিংসতা ঘটানোর চক্রান্ত করছে।
নিহত সোলায়মান খোকনের স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী সেদিন চুরি করতে বা ডাকাতি করতে সেখানে যায়নি। গিয়েছিল মসজিদ নির্মাণ করতে। গুজব রটিয়ে তারা তাকে শুধু হত্যাই করেনি, মরদেহ পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আজও তার বিচার হয়নি।’
নিহত ইব্রাহীম হোসেন রুবেলের স্ত্রী হাজেরা আক্তার তার স্বামী হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
হিযবুত তাওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সেদিন নির্মাণাধীন মসজিদকে গির্জা বলে গুজব রটিয়ে বর্বরোচিত হামলা চালায় উগ্রবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। তারা আমাদের দুজন সদস্যকে হত্যা করে পেট্রল ঢেলে মরদেহ জ্বালিয়ে দেয়।
‘রাজনৈতিক দলের প্রভাবের কারণে এ ঘটনায় জড়িত অনেকে আইনের আওতায় আসেনি। যারা এসেছে তারা জামিনে। যারা পলাতক, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এ ঘটনাটি আমি যোগদানের অনেক বছর আগে ঘটেছে। বিষয়টি স্থানীয়দের মারফতে জেনেছি। ওই এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সার্বক্ষণিক সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে।’