ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের ঘারুয়া গ্রামে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে এই সংঘর্ষে একটি পক্ষের হয়ে পাশের গ্রাম চৌকিঘাটার বাসিন্দারাও জড়িয়ে পড়ে।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে ওই সংঘর্ষ শুরু হয়। আগের দিন লাইটার চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই যুবকের হাতাহাতির সূত্র ধরেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় তিনটি বাড়ি ও দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উত্তেজনা থামাতে বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘারুয়া ইউনিয়নের ঘারুয়া ও চৌকিঘাটা গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঘারুয়া গ্রামের রমজান মাতুব্বরের ছেলে ১৮ বছর বয়সী সজিব মাতুব্বর একই গ্রামের চুন্নু মাতুব্বরের ১৯ বছর বয়সী ছেলে ইমন মাতুব্বরের কাছে সিগারেট ধরানোর লাইটার চাইলে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে রমজান মাতুব্বর ছেলের পক্ষ নিয়ে ইমন মাতুব্বরকে মারধর করেন।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করতে চাইলেও বুধবার সকাল ৯টার দিকে দুই পক্ষের শত শত মানুষ ঘারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় ঘারুয়া বাজারের পাশের মাজেদ ফকির, কাদের মুন্সী ও সৈয়দ আলী মুন্সীর বাড়ি এবং ঘারুয়া বাজারের ওবায়দুর মোল্লা, ফরহাদ মিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই সংঘর্ষে দুই পক্ষের কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ঘারুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সফি উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও সবাই না মানার কারণে ঘটনাটি সংঘর্ষে রূপ নেয়।’
ঘারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মনসুর আলী মুনশী বলেন, ‘সিগারেটের লাইটার চাওয়াকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মাইকিং করে লোক জড়ো করা হয়।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা এসআই মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সংঘর্ষে দুই পক্ষের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের বালিয়াচরা ও সোনাখোলা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলার বাদী ভাঙ্গা থানার এসআই মাসুদ আলম জানান, মঙ্গবার আলগী ইউনিয়নে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে এক এসআই ও দুই কনস্টেবল আহত হন।
এ ঘটনায় কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলায় আসামি হিসেবে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা বহু ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এসআই মাসুদ আলম বলেন, ‘আসামি গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে; তবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’