রাত পোহালেই ভিক্ষার থলে আর থালাবাটি নিয়ে বের হন তারা। মানুষের দ্বারে দ্বারে, রাস্তা-ঘাট ঘুরে ভিক্ষা করেই দিন পার হয়ে যায়। জীবনকে উপভোগের সুযোগ তাদের জন্য যেন বিলাসিতা।
এই ভিক্ষুকদের কিছুটা আনন্দময় সময় উপহার দিতে শেরপুরে হয়ে গেল ভিন্ন এক আয়োজন।
জেলায় বিলাসবহুল গোল্ডেন ভ্যালী পার্কে তাদের জন্য মঙ্গলবার পিকনিকের আয়োজন করে ‘আমরা ক জন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
পিকনিকের নাম দেয়া হয় ‘ভিক্ষাবিলাস’। তাতে অংশ নেয় জেলার অর্ধশতাধিক ভিক্ষুক।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই আয়োজনে মুখরোচক খাবারে পাশাপাশি ছিল নানা রকম খেলাধুলাও।
এর মধ্যে ছিল বালিশ খেলা, হাঁড়ি ভাঙা ও নিজ নিজ প্রতিভা প্রকাশের প্রতিযোগিতা। ছিল গান-নাচের আয়োজনও।
দুপুরে ভিক্ষুকদের আপ্যায়নের পর প্রতিভা প্রকাশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেয়া হয়।
করোনো সচেতনায় সবাইকেই মাস্ক উপহার দেয়া হয়।
পিকনিকে অংশ নেয়া আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাবা আজকা সবাই মিইলা মেলা মজা করলাম। আর ভালা খাবারও খাইলাম। আমরা মেলা খুশি।’
মো. জসিম মিয়া বলেন, ‘আমরা অটোগাড়িত কইরা পিকনিকে আইলাম। ভালা ভালা খাওয়াও খাইলাম। খেলাধুলা ও গান-বাজনা করলাম। আমরা যে ভিক্ষুক তা ভুইলাই গিয়েছিলাম।’
সাফিয়া বেগম বলেন, ‘আজকা এনো আইয়া খুব মজা করলাম। গান-বাজনা করলাম। মেলা খেলা খেললাম। বাবাজিরা আমগরে মেলা আনন্দ দিছে। আমগরে মেলা মানুষ দূর দূর করে আর এরা আমগরে বুকে টাইন্না নিছে। আল্লাহ এগরে বালা করুক।’
স্থানীয় মো. মোবারক বলেন, ‘আমি এই প্রথম ভিক্ষুকদের পিকনিক দেখলাম। আমরা চাই এই আয়োজন প্রতি বছর করা হোক।’
‘আমরা ক জন’ সংগঠনের তরুণ উদ্যোক্তা রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এই প্রথম ভিক্ষুকদের নিয়ে পিকনিক করার আইডিয়া আমার মাথায় আসে। এমন আয়োজন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।
সংগঠনের সদস্য কায়ছার মাহমুদ রাজু বলেন, ‘আমরা আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী ভিক্ষুকদের যথেষ্ট আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা চাই আমাদের মতো যারা আছেন, আপনারাও ভিক্ষুকদের পাশে এসে দাঁড়ান। ভিক্ষাকে না বলুন, ভিক্ষুককে নয়। ভিক্ষা না দিলে ভিক্ষুকরা কীভাবে বাঁচবে। সবার কাছে অনুরোধ, আপনারাও এই অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়ান।’