বগুড়ার ধুনটে হামলার শিকার এক ছাত্রলীগ নেতার মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই হামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এক সঙ্গে কেক কাটতেও দেখা যায় তাকে।
গত ৯ মার্চ সন্ধ্যায় উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কার্যালয়ের সামনে ওই হামলা হয়।
হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেতার নাম শাকিল মাহমুদ। তিনি এলাঙ্গী ইউনিয়নের নলডাঙ্গা গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ওই হামলায় তার বাবা আশরাফ আলীও আহত হন।
হামলাকারীরা সবাই ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য।
ঘটনার তিন দিন পর ধুনট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন শাকিল। এতে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করা হয়। তবে মামলা নেয়া হয়নি।
শাকিলের অভিযোগ, কয়েকজনের নাম বাদ দিতে বলেছেন ওসি। আর যাদের নাম বাদ দিতে বলা হয়েছে, তাদের স্ঙ্গে গত ১৭ মার্চ একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে ওসি ও অভিযুক্তদের এক সঙ্গে দেখা গেছে।
তবে ধুনট থানা পুলিশ বলছে, রেকর্ড করার মতো না হলে মামলা নেয়া হবে না। প্রয়োজনে অভিযোগকারী আদালতে যেতে পারেন।
শাকিলের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ৯ মার্চ ধুনট সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন ছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা দল বেঁধে এলাঙ্গী ছাত্রলীগের কার্যালয় দখল করতে যান। এ সময় সেখানে শাকিলসহ আরও কয়েকজনকে পেয়ে হামলা করেন তারা। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে মারধর করেন।
মারধরের এক পর্যায়ে শাকিলের চিৎকারে আশরাফ আলী ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার ওপর হামলা চালানো হয়।
পরে তাদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে ধুনট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অভিযুক্তরা আবার হামলা করেন। এ সময় ওষুধ কিনতে বের হলে জাকারিয়া নামে আরও একজন হামলার শিকার হন।
শাকিল ও তার বাবার অবস্থা বেশি খারাপ হলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাসায় অবস্থান করছেন শাকিল ও তার বাবা আশরাফ আলী।
শাকিল মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই দিন আমি ও তিন বন্ধু কার্যালয়ের সামনে বসে ছিলাম। কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই মহসীন ও অন্যরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আমার মাথা ফেটে যায়। অনেকগুলো সেলাই দিতে হয়েছে। আমার বাবার মাথাও ফেটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে ১১ মার্চ চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে ধুনট থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু এখনও মামলা হয়নি। পুলিশ বলে অভিযোগে কিছু নাম কেটে দিতে হবে। তাহলে মামলা নেয়া যাবে।’
শাকিল বলেন, ‘অথচ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের ছবিতে প্রধান অভিযুক্ত মহসীনের সঙ্গে ওসিকে দেখেছি। যেখানে মামলার আসামি হওয়ার কথা; সেখানে পুলিশের পাশে দিয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
এ বিষয়টি আমার লিডার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই খোকনের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান শাকিল।
মামলা না নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ধুনট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন।
তিনি জানান, শাকিলের ওপর হামলাকারীরা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। এদের মধ্যে অনেকে বহিস্কৃত রয়েছেন।
খোকন বলেন, ‘শাকিলের করা অভিযোগ থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করছেন না ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। কারণ, হামলাকারীরা সাংসদের লোক। আমরা ঠিক করেছি মামলা না নিলে আন্দোলনে যাব।’
জানতে চাইলে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ‘যদি ত্রুটি থাকে তাহলে তারা কোর্টে যাবে। আমরা যতগুলো পলিটিক্যাল মামলার অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো রেকর্ড করেছি। যেগুলোর রেকর্ড করার মতো না আমরা মামলা হিসেবে নিইনি। সেক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনে তারা কোর্টে যাবে। আরও জায়গা রয়েছে তো।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অভিযুক্তদের সঙ্গে থাকা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘কারা অভিযুক্ত, কে অভিযুক্ত, কে কোথায় গান শোনে এটা সবাই জানে। আপনার মাথাফাটাফাটি হয়েছে এলাঙ্গীতে। আপনি তাদের নাম দেন। আপনি অমুকের নাম দেন। এমপি সাহেবের নাম দেন। তাহলে তো হবে না। তাকে বলে দেন নিজের বুদ্ধিতে চলতে।’
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, যদি ছোট মারামারি ঘটনা হয়, তাহলে মামলা হবে না। বড় ঘটনা বা জখম হয়ে থাকে অবশ্যই মামলা হবে।’