জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্যক্তিশ্রেণির আয়ে আরও কর ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির বার্ষিক করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা। আগামী বাজেটে এই সীমা ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই, সেই সঙ্গে ন্যূনতম করের পরিমাণ পুনর্বিন্যাস করতে বলেছে।
বর্তমানে করপোরেট কর হার ৩০ শতাংশ, যা মুনফার ওপর বছর শেষে কোম্পানিগুলো দেয়।
এফবিসিসিআই মনে করে, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য প্রতিবেশি দেশসমূহের কর হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে করপোরেট কর হার আরও আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করা উচিত।
নতুন আয়কর আইন দ্রুত কার্যকর করার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআিই।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এসব প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই।
মঙ্গলবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এনবিআরের পরামর্শক কমিটির যৌথ সভায় অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ প্রস্তাব করেন ফেডারেশনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
লিখিত প্রস্তাবে আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি শুল্কে কয়েক দফা সুপারিশের কথা উল্লেখ করে আগামী বাজেটে তা প্রতিফলনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তিনি।
বর্তমানে কাঁচামাল আমদানিতে ৩ শতাংশ আগাম কর দিতে হয়। এফবিসিসিআই মনে করে, এই করের ফলে শিল্পোৎপাদন খরচ বাড়ে। ফলে এটি প্রত্যাহার করা উচিত।
বর্তমানে লেনদেন কিংবা বিক্রির ওপর করা আরোপ করা হয়। এফবিসিসিআই বলেছে, শুধু করযোগ্য আয়ের উপর কররোপ করতে হবে। অন্য কোনো বিষয়ের উপর নয়। বেতন, ফি, সুদ ও লভ্যাংশ ব্যতীত অন্য কোনো লেনদেনের উপর অগ্রিম আয়কর রহিত করার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।
লভ্যাংশের ওপর উচ্চ হারে কর থাকায় কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দিতে নিরুৎসাহিত হয়। কোনো ক্ষেত্রে তা বিনিয়োগকেও নিরৎসাহিত করে। এ কারণে লভ্যাংশের উপর কর হার ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।
একবার অডিট করলে সেই ফাইল পরবর্তী তিন বছর অডিট না করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
এছাড়া মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আহরণ বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে ১১টি খাত থেকে মোট ভ্যাটের ৮৫ শতাংশ আসে। এগুলো হলো: সিগারেট, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, গ্যাস, ব্যাংক, ওষুধ, বিদ্যুৎ, প্রেটোলিয়াম, সিমেন্ট, সিরামিক, টাইলস এবং বেভারেজ।
এসব পণ্যকে বিশেষ ব্যবস্থায় এনে তদারকি জোরদার করার কথা বলেছে এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাটের বোঝা কমাতে হবে।
আমদানিকৃত কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ যাবতীয় শিল্প উপকরণের উপর অগ্রিম আয়কর ও আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়।
আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি রোধে কাস্টমস পদ্ধতি আন্তর্জাতিক পদ্ধতির সঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রস্তাব এসেছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
রমজানে ভোক্তা যাতে সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনে খেতে পারে, সে জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারিক ব্যবস্থা আরও জোরদারের সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।
জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বাজেটে আরও বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।