সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ভাইরাল হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়।
দায়িত্বশীল পদে থাকা ছাত্রলীগ নেতার এমন বক্তব্য নিয়ে ট্রোল করেছেন অনেক নেটিজেন। যদিও এমন বক্তব্যের জন্য পরে ক্ষমা চেয়েছেন ছাত্রলীগের ওই নেতা।
তবে বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তাদের অনেকেই বিষয়টিকে নিছক ভুল হিসেবেই দেখছেন। আবার কয়েকজন বিষয়টিকে নিছক ভুল মানতে নারাজ।
তবে সবাই ভুল শুধরে রাজনৈতিক চর্চা বাড়িয়ে জাবি ছাত্রলীগকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিন উপলক্ষে তাকে নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে বক্তব্য দেন হাবিবুর রহমান লিটন। পরে এই বক্তব্যের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় বিতর্ক।
এই বিতর্ক নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। এটা আসলে স্লিপ অব টাং। প্রোগ্রামটা ছিল দুইদিন ব্যাপী। আমার সারা রাত ঘুম হয়নি। আরেকটা বিষয় হলো- যেখানে বক্তব্য দিয়েছি তার পেছনে একটি মেশিন বসানো ছিল। যার অনেক শব্দও ছিল। আর অনেক মানুষের কোলাহল ছিল।’
ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে মন্তব্য করেছেন ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এসএ শামীম বলেন, ‘এটা খুব দুঃখজনক! এটা সত্য যে, সে দুঃসময়ে ছাত্রলীগ করা ছেলে। ২০০৬-০৭ সালে সে সাভার উপজেলার পাথালিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে শিক্ষা-দীক্ষা বড় কথা না, একটা মানুষ যদি বঙ্গবন্ধুকে জানতে চায় তাহলে প্রতিদিন একটা করে শব্দ শিখলেও ভালো জ্ঞান রাখবে।’
শামীম বলেন, ‘তার পাশ থেকেও কেউ সঠিক তথ্য দেয় নাই। হয়ত বক্তব্য দেয়ার সময় অনেক লোকসমাগম দেখে সে ঘাবড়ে গেছে।’
ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে লিটনের অনভিজ্ঞতাকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘নতুন দেখেই এই ধরণের ঘটনাটা ঘটছে বলে আমার মনে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনা থেকে সবারই শিক্ষা নেয়া উচিত। আগামীতে যারা ছাত্র রাজনীতি করবে এবং যারা করছে তারা যেন বেশি করে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পড়াশুনা করে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এই ধরণের ভুল যেন না হয়। এজন্য আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’
এটা নিয়ে ছাত্রলীগে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে সাইদুল বলেন, ‘অনেকে আছে খারাপভাবে নেয়ার চেষ্টা করবে। অনেকে এটাকে সুযোগও মনে করছে। ছাত্রলীগের মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সে ভুল করছে, ভুল করতেই পারে বা ভুল হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে কিভাবে সমাধান করা যেতে পারে তাকে এই ধরনের পরামর্শ দেয়া উচিত।’
বক্তব্যের বিষয়ে নিউজবাংলার কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাবি ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতাসহ নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল শাখার সাবেক সহ-সভাপতি আকলিমা আক্তার এশা বলেন, ‘বক্তব্য দেয়ার প্র্যাকটিসের অভাবেই ভুলটা হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় লিটন এলোমেলো করে ফেলছে। এই ব্যাপারটায় আরও সচেতন থাকা উচিত।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল শাখার সাবেক সহ-সভাপতি আকলিমা আক্তার এশা
এশা আরও বলেন, ‘এইটাকে কেন্দ্র করে একজনকে জাজ (বিচার) করা উচিত না। জাজ করার জন্য আরও অনেক কিছু আছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাবি ছাত্রলীগের আরেক নেতা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেই সাধারণ মানুষ অনেক কিছু আশা করে। বক্তব্য দেয়ার চর্চাটা আমাদের মধ্যে থাকলে এইটা হতো না।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনি বিষয়টিকে ‘স্লিপ অব টাং’ হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘এটা কমন মিসটেক হতে পারে। আমি ভিডিওটা দেখছি, বঙ্গবন্ধু বিয়ের সাল সে ১৯১৮ বলেছে। হয়ত ১৯৩৮ এর জায়গায় ১৮ বলে ফেলেছে। আমার যেটা মনে হয়, অনেক নেতাকর্মী ছিল। নারভাসনেস থেকেই এ রকম হয়ে যেতে পারে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনি
তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে আমি বলতে চাই, যেহেতেু এরা নতুন নেতৃত্বে এসেছে, তাই এদের আরও সুযোগ দেয়া উচিত। তবে পরবর্তীতে বক্তব্যের ক্ষেত্রে আরও সচেতন, সতর্ক থাকতে হবে। আশা করি, এই ভুলটা শুধরে তারা সামনে এগিয়ে যাবে।’