ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং অগভীর নলকূপ থেকে পানি না উঠায় শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ি এলাকায় ৬ ইউনিয়নে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশুদ্ধ খাবার পানি না পেয়ে ঝর্ণা, পুকুর ও কূপের পানি পান করছেন এলাকার মানুষ।
দেশের সীামন্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ি এলাকার মাটির নিচে প্রচুর পাথর থাকায় সাধারণ গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। আবার অগভীল নলকূপেও মেলে না পানি।
তাই মাটির কুয়া ও পুকুর থেকে ময়লা পানি তুলেই চলছে খাওয়া, গোসল, কাপড় ধোঁয়াসহ প্রতিদিনের কাজ। এ এলাকার মানষের এমন কষ্ট করেই চলতে হচ্ছে বছরের অন্তত ৬ মাস।
গারো পাহাড়ি এলাকায় দৈনন্দিন কাজের জন্য পুকুর থেকে পানি নিচ্ছেন এক নারী। ছবি: নিউজবাংলা
শেরপুরের শ্রীবরদীর রাণিশিমুল ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম এবং ঝিনাইগাতী সদর, কাংশা, ধানশাইল, নলকুড়া ও গৌরীপুর ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ এভাবেই পানি সংগ্রহ করছেন।ভুক্তভোগীরা বলছেন, পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় ও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামার কারণে শুকনো মওসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই এসব গ্রামের কোনো টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। একমাত্র বিদ্যুৎচালিত গভীর সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করা সম্ভব। প্রতিটি সাবমারসিবল বসাতে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। যা এখানকার মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।
ব্যক্তি মালিকানায় কেউ কেউ বিদ্যুৎ চালিত গভীর সাবমারসিবল পাম্প বসালেও সেখানে পানির জন্য ভিড় করছেন আশপাশের লোকজন। দূরদুরান্ত থেকে মানুষ এসে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করছেন এসব পাম্প থেকে।
স্থানীয়দের দাবি, সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় গভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করা হউক।
দূর গ্রামে ব্যক্তি মালিকানার গভীর নলকূপ থেকে পানি নিয়ে ফিরছেন নারীরা। ছবি: নিউজবাংলা
রাণীশিমুল ইউনিয়নের বালিজুড়ি গ্রামের সামিরা বলেন, ‘পাহাড় এলাকা পানি নাইখে। পানি বেগড় বালা পানি কাবার পাইতেছি না। কুইয়ার পানি খাই। পাগাড়ের পানি দিয়া বাসন ধুই। এই জন্য আমাগোরে অসুখ অইতাছে।’
কাংশার ফাতেমা বেগম বলেন, ‘খরান দিন আইলে পানি পাওন যায় না। ৫/৬ মাস পানি পাই না। মেলা দূরের মাইনসের সাবমিরসিবল থাইক্কে পানি আনি। তাও দিবার চায় না। আমরা খুব কষ্টে আছি। আমগোর বালা পানির ব্যবস্তা করার নাইগা অনুরোধ করতাছি।’নলকুড়ার আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা শীতকালে পানি পাই না। মাইটে কুয়ার পানি খাইতে খাইতে আমাগোর নানা অসুখ অয়তাছে। আমরা একটা গভীর নলকূপ চাই।’জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের শ্রীবরদী উপজেলার প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পানির সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আগের চেয়ে এ সমস্যা অনেকটা কমে গেছে। প্রয়োজনীয় সাবমারসিবল পেলে আমরা বসিয়ে দেব।’ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এম ওয়ারেছ নাঈম বলেন, ‘উপজেলার মানুষ পানির জন্য কষ্ট করছেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যাক গভীর নলকূপ নেই। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’