দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে পারাকে সরকারের একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সাফল্য যে আমরা প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছি। এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’
প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি স্বপ্ন পূরণ করেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, দেশে কোনো মানুষ আর গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে বর্তমান সরকার সচেষ্ট।’
এ সময় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এখন পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন এবং শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘদিন ধরে সরকার পরিচালনা করায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতাই সাফল্যের আরেকটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের ওপর দেশের জনগণ আস্থা রাখায় এবং ভোট দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেয়ায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমতি দেয়ার প্রসঙ্গটিও উঠে আসে তার কথায়। তিনি জানান, মেঘনা ঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট বেসরকারি খাতে নির্মিত প্রথম পাওয়ার প্ল্যান্ট।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় দেশে মাত্র ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন সরকারপ্রধান। তিনি জানান, তার সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিল।
কিন্তু পরের পাঁচ বছরে বিএনপি-জামায়াত জোট এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন তো বাড়ায়নি, বরং কমিয়ে ফেলে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর দেখা যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কমে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে নেমে গেছে।
বিদ্যুৎকে শিল্পায়নের চালিকাশক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক চর এলাকায় নদী এবং সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে গ্রিড লাইন নেই সেখানে সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ দিয়েছি। আবার সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে মূল বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যাতে সেখানে শিল্পায়ন হতে পারে।’
সন্দ্বীপের উদাহরণ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেখানে প্রথমে আমরা সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের পর সাবমেরিন কেব্ল দিয়েও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। চর কুকরিমুকরি, রাঙাবালিতেও আমরা সেভাবে দেয়া শুরু করেছি।’
দক্ষিণাঞ্চল অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, তার সরকার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর, সেনানিবাস, সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের উন্নয়ন করেছে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এ অঞ্চলে সবাইকে বেশি করে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ তৈরির আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ খুব কঠিন, কাজেই প্রকৃতি কীভাবে এটা করে সেটা আমি নিজের চোখেই দেখেছি বহুবার। তারপরও আমি বলব, মানুষের সুরক্ষার যে বিষয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি এবং গতকাল আমি বলেছি সবাই গাছ লাগাবেন। এই দায়িত্বটা আমাদের কৃষক লীগের ওপর ন্যস্ত থাকে। তাদেরই উদ্যোগে আষাঢ় মাসে সারা দেশে বৃক্ষরোপণ করা হয়।’
পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে একসময়কার চরম দুর্দশাগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের জীবনমান আরও উন্নত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।