‘সকাল ১০টায় টিসিবির মাল কিনতে আসছি। অ্যালা কয়টা বাজে দ্যাকো? সাড়ে ৩টা। অ্যালাও সিরিয়াল নাই, কোনবেলা দিবে তাও তো জানিনে। ওইদোত (রোদ) কতক্ষণ বসি থাকি।’
কথাগুলো বলছিলেন রংপুর সদরের অভিরামপুর ফুটবল মাঠে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা দিনমজুর হরিদেবপুরের হযরত আলী। তিনি জানান, কাজ শেষে মজুরি পান ৫০০ টাকা। টিসিবি থেকে নিত্যপণ্য কিনতে লাগে ৪৫০ টাকা। তারপরও রোদ সয়ে দাঁড়িয়ে আছেন টিসিবির ট্রাকের পেছনে।
তবে দিন গড়িয়ে বিকেল হলেও পণ্য হাতে পাননি তিনি।
একই অভিযোগ গোকুলপুর চওড়া পাড়ার দিনমজুর মো. রনির। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। গতকাল কার্ড তুলতে দিনটে গেছে। আইজ মাল তুলতে গেইলো। তাহলে গরিব মানুষের লাভ হইল কী? দুই দিনে লস হইলো ১০০০ টাকা, আর মাল কিনি লাভ হইলো ১৪০ টাকা। মানে বাইরে মাল কিনতে নাগিল হয় (লাগে) ৬০০ টাকা, এটে (টিসিবিতে) নিবে ৪৫০ টাকা।’
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে দেখা গেছে ওই মাঠে টিসিবির ট্রাক ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা। ক্রেতারা কখনও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, কখনও গাড়ি ঘিরে ধরে আছেন। কখনও সবাই ধাক্কাধাক্কি করছেন লাইন ভেঙে।
ট্রাকের দায়িত্বরতরা ব্যস্ত কার্ড যাচাই-বাছাইয়ে। সিরিয়াল ঠিক করতে মাঝে মাঝে পুলিশ ও গ্রাম পুলিশদের তৎপর হতে দেখা গেছে।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার এখানে ১২৬০ জনকে টিসিবির পণ্য দেয়া হবে। বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৫৬০ জনকে পণ্য দেয়া হয়েছে।
এখানকার ক্রেতাদের বেশির ভাগই দিনমজুর। তাদের অভিযোগ, পণ্য কিনতে এসে পুরো দিন এখানেই শেষ। কাজ করতে পারেননি আজ; তাই কামাইও হয়নি।
হবিবর রহমান নামে একজন বলেন, ‘কার্ড তো দেকি দেকি দিচে... এত যন্ত্রণা ক্যানে। মাল নিতে দিন শ্যাষ। মজুরি দেই কখন।’
হরিদেবপুর এলাকার ফকিরান গ্রামের অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আলচি ১২টায়। একনো (বেলা সাড়ে ৩টা) মাল পাইনো। আইজকের কাম হইল না... খায়া না খায়া দিন যাওছে।’
টিসিবির ডিলারের পক্ষে সিরাজুল ইসলাম রবিন বলেন, ‘আমরা ঠিক সময়ে মাল নিয়ে আসছি। এখানকার ম্যানেজমেন্ট কার্ড ঠিক সাজাতে না পারায় আমরা দ্রুত দিতে পারিনি। তবে, মাল দিচ্ছি, দেব।’
টিসিবির দায়িত্বে থাকা হরিদেবপুর ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘নামাজ পড়তে গেছি, এসে দেখি এই অবস্থা। আমরা সবাইকে মাল দেব।’
ঘটনাস্থলে থাকা রংপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দিতে।’